ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা - শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। তার অকাট্য দলিল হলো আল কোরআন। মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আল আমিন পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ) কে প্রেরণ করেন ইসলাম ধর্মের ওপর শিক্ষা দিয়ে এবং তাঁর মাধ্যমে নবুওয়াতের সূচনা করেন। আর সেই নবুওয়াতের পূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি ঘটান রাসূলে করিম হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে। কোনো কোনো মতান্তরে এক লক্ষ ছব্বিশ হাজার, আবার কোনো কোনো মতান্তরে দুই লক্ষ ছব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁরা সকলেই ছিলেন ইসলাম ধর্মের পথপ্রদর্শক। নবী ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য হলো: যিনি নবী, তাঁকে রাসূল বলা যাবে না। তবে যিনি রাসূল তাঁকে নবীও বলা যাবে রাসূলও বলা যাবে। সকল নবীনগণ ছিলেন সর্বোউত্তম চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেকে নবীকেই আল্লাহতালা মোজেজা দান করেছেন। নবীগণ ইন্তেকালের পর সাথে সাথে তাদের মোজেজাও আল্লাহতালা উঠিয়ে নিয়েছেন, শুধু ব্যতিক্রম ঘটেছে মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের। তাঁর মোজেজা ছিল আল কোরআন তা রয়ে গেছে এবং আল্লাহতালা কেয়ামতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে মোজেজা জীবন্ত রাখবেন।
১. দিক নির্দেশনা: জীবনের এমন কোনো দিক অবশিষ্ট্য নেই, যে দিকে ইসলামের স্বচ্ছ, সুন্দর ও নির্ভুল নির্দেশনা নেই। আর এই ইসলামকে সহজলভ্যভাবে বুঝার জন্য মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আল আমিন ১০৪ খানা আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন, ১০০ খানা ছোট ও চারখানা বড়। চারখানা হলো: তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল ও আল কোরআন। আর ১০০ খানা সহিফা নামে পরিচিত। তাওরাত নাযিল হয় হযরত মূসা (আঃ)- এর ওপর, জবুর হযরত দাঊদ (আঃ)-এর ওপর, ইঞ্জিল হযরত ঈসা (আঃ)-এর ওপর ও আল কোরআন নাযিল হয় হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর। যুগে যুগে আল্লাহতালার নবী রাসূলগণ সে সকল কিতাব ও কালেমার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। সর্বশেষ ও চূড়ান্ত আসমানী কিতাব আল কোরআন, যার মধ্যে আল্লাহতালা সকলকিছু প্রকাশ করে দিয়েছেন কোনো কিছুই গোপন রাখেন রাখেন'নি!
২. মানুষ থাকবে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত: আমি আপনি এমন কি, জগতের সকল মানুষেই, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই পৃথিবীতে এসেছি। আর সেই সময়কাল অতিবাহিত হলে, সকলকে ফিরে যেতে হবে মালিকের কাছে। অতএব, সেইদিন আমার আপনার পুণ্য ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আর সেই পুণ্যের কাজ আমরা কতটুকু করেছি? (নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত) তার কিছু করেছি কি? যা আমাদের মাঝে পরিলক্ষিত ছিলো তা হলো। ভাই ভাইয়ের প্রতি বিরূপ মনোভাব, পিতা পুত্রের দম্ভ, মায়ের প্রতি অসাধু আচরণ! মানুষ হয়ে মানুষকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ, নিজের বিলাসিতা জন্য, সুদ- ঘুষ ভ্যাবিচারে মত্ত হয়ে অর্থলোভে সত্যকে গোপন করে, মিথ্যের ফাঁদ পেতে, সম্পদের অট্টালিকা গড়ে তুলেছি!
৩. আমি, আপনি যত বড় প্রভাব বা প্রতিপত্তির অধিকারী বা সম্পদের মালিকেই হই না কেন। আরো একজন মহা মালিক আছেন। তাঁর কাছে একদিন এই মালিকা হস্তান্তর করতে হবে। সেইদিন আমার আপনার কাছে কিছুই থাকবে না। আমরা সকলেই শূন্য হয়ে যাবো। কর্মগুণে ফলাফল বুঝিয়ে দেওয়া হবে। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আল আমিন সেদিন কারো প্রতি কোনো জুলুম, ভ্যাবিচার করবেন না। কেননা, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারক।
৪. ইসলামেই আমাদের শিক্ষা দেয়: পিতামাতার প্রতি কি রূপ আচরণ করতে হবে। মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত তা কেবল ইসলামের ধর্মীয়গ্রন্থ ও সহিহ্ হাদিস থেকে জানতে পারি। শুধু ইসলামেই নারীকে দিয়েছে মায়ের মর্যাদা। বিভিন্ন ধর্মে নারীরদেরকে নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত করেছে: কোনো ধর্মে বলা হয়েছে, নারীর সৎকর্মের থেকে পুরুষের দুষ্কর্মও ভালো। কোনো ধর্মে বলেছে নারীরা হলো নরকের কীট। আর এই নারীকেই ইসলাম দিয়েছে মায়ের মর্যাদা।
দিয়েছে পিতার সম্পদে ছেলেমেয়ের সমান অধিকার।
৫. প্রতিবেশির হক: তুমি যা খাবে, তা তাদেরও খেতে দেবে, তুমি যা পরতে তাদেরকেও পরতে দেবে। তারা কিভাবে চলে সেই খোঁজখবর নেবে, বিপদে- আপদে সবসময় তাদের পাশে দাঁড়াবে। কেননা, তোমার আপদে -বিপদেও সে প্রতিবেশিই দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের প্রতি কোনোরূপ খারাপ আচরণ করবে না। সে যদি তোমার চেয়ে দরিদ্রও হয়, তাকে হিংসার করো না। প্রতিবেশির জন্য পরিপূর্ণ হক আদায় করে চলবে। এই সকল নৈতিকতা শুধু ইসলামেই বিদ্যমান।
৬. আমানতের খেয়ানত: কোনো মানুষ যদি কোনো মানুষের কাছে কোনো আমানত রাখে। তবে সেই আমানত খেয়ানত না করতে ইসলামে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা টাকা হোক পয়সা হোক, সম্পদ হোক গাড়ি বাড়ি হোক। কোনো আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। তা যদি আমরা হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শের দিকে লক্ষ্য করি। তবে আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। মক্কা নগরীর বেদ্বীন ইহুদিরাও তাঁর কাছে আমানত রাখতেন। কেননা, তাঁরা জানতেন মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে কারো আমানতের খেয়ানত হতে পারে তিনি এমন ব্যক্তি নন। তাই তাঁকে আল আমিন নামে (মানে বিশ্বাসী) উপাদিতে ভূষিত করা হয়েছিল। আমাদের রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমানতের খেয়ানত করতে নিষেধ করেছেন।
৭. এতিম মিসকিনের প্রতি সহায় হও:
এতিমের সম্পদ হরণ করো না। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। কারণ আল্লাহর নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এতিম ছিলেন। মিসকিনকে তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করো। ইসলামের এই নির্দেশনা যদি প্রতিটি মানুষের জীবনাদর্শ হয়। তবে এই পৃথিবীতে কোনো জুলুম ভ্যাবিচার থাকবে না। সুদ -ঘুষ অন্যায় অত্যাচার বিলিন হয়ে যাবে। যতদিন ইসলামিক আর্দশ ও কোরআনের সংবিধান থাকবে- ততদিন এই পৃথিবী ভালো থাকবে ও সুরক্ষীত থাকবে।
৮. সৃষ্টির বিশালতা: চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র নদ-নদী, পাহাড় -পর্বত, সাগর-মহাসাগর এগুলো হলো আল্লাহর দেওয়া নিদর্শন। তাদের দিকে তাকালে বুঝা যায় মহান আল্লাহ্ কতটা শৈল্পিক মননে তা সৃজন করেছেন। মানুষের চেয়ে এত কাছের নিদর্শন আর কি হতে পারে। এক সময় আমাকে উল্লেখ করার মত আমি কিছুই ছিলাম না। একটি জমাট রক্ত থেকে মাংস পিণ্ডতে পরিনত হয়েছি। আস্তে আস্তে আমার আকার আকৃতি হয়েছে, তারপর সে সময়কাল অতিবাহিত হবার পর ভূমিষ্ঠ হয়েছি এই পৃথবীর মুখ দেখেছি। অথচ আজ আমর সেইসব চিন্তা করার সময় নেই।
দিন থাকিতে দ্বীনের কর্মে চলে সরল পথে,
মুক্ত করো অপকর্ম কোরআন হাদিস মতে।
ইরশাদ করেন: আমিই আল্লাহ আমি ব্যতিত আর কোনো ইলাহ্ নেই। অতএত আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামাজ কায়েম কর। সূরা ত্বোয়াহ-১৪
মহান খোদার কুদরতী পায় সেজদা করো শত,
মরণ কথা স্মরণ করে শিরটা করো নত।
প্রতিটি মানুষের জীবন হোক ইসলামিক আদর্শ ও ঐতিহ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আল কোরআন হোক জীবনের শ্রেষ্ঠ সংবিধান।
লেখকের ঠিকানা :
বাউশাম, কলমাকান্দা,নেত্রকোনা
কবি, ছড়াকার, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
সম্পাদক ও প্রকাশক : দৈনিক দিকের বার্তা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন