নতুন কুঁড়ি | মধুমাসের মধুফল
নতুন কুঁড়ি | মধুমাসের মধুফল
_____________
১
গাঁয়ের পরিবেশ
সাকিব মাহবুব
সবুজে ঘেরা আমার গাঁয়ে নানা পাখির মেলা
গাছের শাখে কলরবেই কাটায় সারা বেলা।
বন-বাদাড়ে পাতার ফাঁকে নানান ফুল ফুটে
ঋতুর ভেদে হরেক ফলে নজর নেয় লুটে।
গাঁয়ের মাঠে চাষি ভাইয়ে করে যে হাল চাষ
ফসল ফলে সারা বছর মিটে খাবার আশ।
সবুজ মাঠে রাখাল ছেলে চরায় গরু মেষ
হিজল তলে বাজায় বাঁশি ছড়ায় সুর বেশ।
গাঁয়ের পাশে সোনাই নদী কলকলিয়ে চলে
ভাটি গানের সুর হামেশা শুনি মাঝির গলে।
কলসি ভরে গাঁয়ের বধূ নদীতে স্নান শেষে
ঘোমটি 'নায়ে কন্যা যায় নববধূর বেশে।
বিল-নদীতে নানা জাতের মাছেরা খেলা করে
সকাল-সাঁঝে পানিতে নেমে জেলেরা মাছ ধরে।
বকের সারি মাছের খুঁজে বেড়ায় খালে-বিলে
ছোঁ মেরে মাছ ধরে পালায় মাছরাঙা ও চিলে।
জন্মেছি এ গাঁয়ের বুকে গর্ব করি তাই
সুখে-দুঃখে বসত করে শান্তি মনে পাই।
ছায়ায় ঘেরা পরিবেশেই কাটে আমার ক্ষণ,
রূপের শোভা দেখে দেখেই পুলকে ভরে মন।
২
ঘাসফুল
এইচ.টি মাহির
কেউ মাড়িয়ে যায়,
সবুজ গালিচায়
দুমড়ে মুচড়ে বিবর্ণ,
সাদা স্বপ্ন চূর্ণ
কতো ভুল!
তবু ফোটে,
ছোট ছোট ছন্দে,
জীবনানন্দে।
মেঠো পথের ধারে
ডাকে আমারে।
সুবাস ছুটে।
৩/
বত্রিশ
©অঞ্জলি দেনন্দী, মম
আমি আর ছোট নই।
এই দ্যাখো আমার বত্রিশ দাঁত।
চিবিয়ে খাই বাদাম, বাতাসা, খই।
টুথপেস্ট আর ব্রাশ ধরে আমার হাত।
সাফ করে সেই বত্রিশ সাদা অঙ্গ।
এই বত্রিশ শক্ত, মজবুত অতি।
দাঁতের ওপরের পাটির নাই গতি।
দাঁতের নিচের পাটি গতিযুক্ত।
হাসিতে এই বত্রিশ দেয় সঙ্গ।
এরা নানান নামযুক্ত।
এখন আমার বয়স সাত।
আমার নানাজির নাই দাঁত।
যদিও তার বয়স সত্তর যুক্ত সাত।
হ্যাঁ, সাতাত্তর, আছে তার বাঁধানো দাঁত।
সে বলে যে আমার মত ছিল
তারও বত্রিশটি দাঁত।
বার্ধক্য তার দব দাঁত ফেলে দিল।
৪/
স্মরণে সত্যজিৎ রায়
অশোক কুমার ঠাকুর
বিশ্ব জোড়া খ্যাতি যে তার বিরাট মাপের গুণী
আজকে চলো সেই গুণিনের গুণের কথা শুনি।
চলচ্চিত্রে ছিলেন দেশের আকাশ ছোঁয়া স্তম্ভ
যাকে নিয়ে ভারতবাসীর সর্বকালের দম্ভ।
দুর্গা ছোটে অপু ছোটে, ছুটছে রেলের গাড়ি
কাঁশবনের সেই দৃশ্যগুলো ভুলতে কি আর পারি!
গল্প লেখায় উঠত ভেসে সমাজ ছবি নিত্তির
প্রফেসর শঙ্কু আসেন, আসেন ফেলু মিত্তির।
হরেক রকম গল্প লেখেন রহস্য ও বিজ্ঞানের
কিশোর মনে পৌঁছে দেন সত্য তথ্য ঠিক জ্ঞানের।
সঙ্গীতেও ছিলো যে তাঁর দারুণ রকম দক্ষতা
চলচ্চিত্রে কথায়-সুরে তাই তো নিবিড় সখ্যতা
গান লিখে ও সুর দিয়ে, বাঁধেন স্বরলিপি
আজকে তাঁর স্মরণ দিনে সে সব স্মর-লিপি।
ছবি আঁকার হাতটি ছিলো ভারি চমৎকার
তাঁর গল্পে অলঙ্করণ, নিজের হাতে তাঁর
সিনেমার সব দৃশ্যগুলো খাতার বুকে এঁকে
শ্যুটিং শুরুর আগে সবই মিলিয়ে নিতেন দেখে।
দেশের গন্ডি পেরিয়ে আজ বিশ্ব খ্যাতি তাঁর
চলচ্চিত্রে সেরার সেরা পেয়েছেন 'অস্কার'
'অক্সফোর্ড' এর 'ডিলিট' তিনি, তিনি' ভারতরত্ন'
তিনি ই আবার 'পদ্মভূষণ', সাফল্যের প্রযত্ন
পুরস্কার কত শত 'দাদা সাহেব ফালকে'
জয় করেছেন সত্যজিৎ, কালে'র 'মহাকাল'কে।
৫/
বাংলাভাষা
মোঃ আল - আমিন
বলছি কথা বাংলা আমি
গাই যে সুখে গান,
বাংলা হলো মায়ের ভাষা
মন জুড়ানো তান।
শুনতে কত মধুর লাগে
সবার সেরা ভাষা,
মায়ের ভাষা বাংলা সেতো
আমার আলো আশা।
মনের কথা এই ভাষাতে
বলতে পারি হেসে,
মনের ব্যথা আছে যতই
দূর করে যে শেষে।
মিষ্টি মাখা গানের সুরে
মাঝি ভাইয়ে গায়,
বাঁশির সাথে রাখাল ছেলে
মাঠের ধারে ধায়।
বাংলা হলো কান্না-হাসি
বাংলা হলো শ্বাস,
ভালোবাসার তীর্থভূমি
রক্তে কেনা হাস'।
৬/
এসো বন্ধু আমার গাঁয়ে
শঙ্করী সাহা
শহর থেকে বন্ধু তুমি
এসো আমার বাড়ি,
আমার গাঁয়ে আসলে তুমি
চড়বো গরুর গাড়ি।
সকাল -বিকাল ঘুরবো দুজন
আমার সোনার গাঁয়ে,
ঘুরেফিরে প্রাণ জুড়াবে
সবুজ শ্যামল ছায়ে।
আঁকা বাঁকা পথ পেরিয়ে
যাবো গাঁয়ের হাটে,
পাখির মেলা দেখবো মোরা
বসে নদীর ঘাটে।
আমার বাড়ি আসলে বন্ধু
পিঠাপুলি খাবে,
মায়ের হাতের পায়েস খেয়ে
মনটা ভরে যাবে।
খেতে দেবো আম জাম কাঁঠাল
খাবে মনটা ভরে,
বিকেলবেলা ঘুরতে যাবো
হাতটা তোমার ধরে।
৭/
তোমায় নিয়ে বাঁচি
আহমেদ হানিফ
গ্রীষ্মের খরতাপে অস্থির এই নগরে,
চাতকের ন্যায় অসহায় মানুষে,
প্রশান্তির উপলব্ধি আনে-
একটুখানি শীতল বাতাস।
থমথমে দুপুরে ক্লান্ত পথিকের পথ,
দীর্ঘায়িত হয়ে পড়লেও,
নিরাশার অনুযোগের মোচন ঘটে-
ছায়া দানকারী গাছটার অকৃপণতায়।
পৃথিবীর সুখগুলোর শত ভাগে,
ভালোত্বের সংস্পর্শ হৃদয়ে প্রশান্তি আনে,
খরতাপ গ্রীষ্মের প্রাণহীনতায়-
চাতকের উপলব্ধি কষ্টের উপলক্ষ্য আনে।
জাগতিক শত গল্পে,
শত অভিযোগ-অনুরোধে,
খরতাপে জ্বলন্ত দেহটায়-
শীতল বাতাস সুখানুভূতি জাগায়।
তবে,
এইসব জাগতিকজ্ঞান বিতরণে পারঙ্গম নই,
গ্রীষ্মের খরতাপ-শীতল বায়ুতে-
আমি আবদ্ধ নই।
আমি প্রেমহীন নগরে,
প্রাণের সঞ্চারে বেরিয়ে পড়েছি,
জাগতিক মোহে আবিষ্ট নই-
শুধু তোমাতে বেঁচে আছি।
পৃথিবীর গল্প গুলো হারিয়ে যাবে,
চাতকের হাহাকারও থামবে,
মোহে জড়াবে না কেউ-
যখনি আবদ্ধ হবে প্রেয়সীতে।
আমি দ্বিধাহীনভাবে বাঁচি,
তোমার পানে চেয়ে,
কবিতা হই কিংবা কবি-
তোমাতেই যেন বেঁচে থাকি।
আবারো শীতল প্রবাহে প্রশান্তি আসবে,
মানুষে সৌহার্দ্য রচিবে,
চাতকের উপলব্ধিতে শান্তি-
আমিও বাঁচবো তোমায় নিয়ে।
৮/
শাহীন খানের রম্য কবিতা
মাকে বলে দেয় ফোনে
বউ যদি হায় বইয়ের মতো পাল্টানো খুব যেতো
কী মজা কী মজা আমার বুকটা যে সুখ পেত।
এই তো সেদিন রাতের বেলা দেরি করে আসায়
বঞ্চিত হই ঠিক যে আমি নিটোল ভালোবাসায়!
চেঁচিয়ে বলে, এতো দেরি ক্যান? কোথায় ছিলে তুমি?
তোমার সাথে ঘুর ছিলো কী গীতা,রিতা ঝুমঝুমি?
চরিত্রহীন লম্পট তুমি বুঝিনি তো আগে
আস্ত একটা ভেজাবেড়াল, দেখতে তোমায় লাগে।
কাল থেকে আর উঁনুনে তোমার পাক ধরাবো না আমি
এতোদিনে হায় বুঝে গেছি আমি কেমন তুমি স্বামী!
পাশের বাড়ির টুনটুনির বাপ কতো ভালো কতো ভালো
নেহাদ একটু মালটাল খায়, রংটা গায়ের কালো।
বউয়ের কথায় উঠবোস করে, বউয়ের কথায় 'গেলে'
অমন ভালো মনের মানুষ ধরাধামে কী আর মেলে?
বছর বছর বাচ্ছা বানান, তুমি কিসের মরদ
সত্যি বলো আমার প্রতি আছে কী তোমার দরদ?
একটি 'ছাওয়াল' আসেনি ঘরে, কী নিয়ে হায় বাঁচি
এতো করে বলি, ডাক্তার দেখাও, শুনে দাও তুমি হাঁচি!
বলবো না কো কোনো যে কথা, ইনবক্সে আছে "উনি"
আমার সাথে পাঙা নেবে ? এতো সাহস কার শুনি?
খাচ্ছি ঠ্যালা, বউকে আমি কেমন করে বোঝাই
ব্যবসার কাজে বরিশাল গিয়েছি, এক পোশাকে সোজা-ই।
ফোনে আমার চার্জ ছিলো না হয়নি রে তাই বলা
আর হবে না লক্ষ্মীসোনা, খাচ্ছি যে কানমলা।
কে কার কথা শোনে-
আমার গুষ্টি পিন্দি করে
মাকে বলে দেয় ফোনে।
৯/
পথচলা || মোঃ সাকিবুর রহমান
সামনে আমার চলতে হবে
পথ রয়েছে বাকি
ব্যস্ত শহর নগর মাঝে
কেমন করে থাকি।
শহর বুকে আপন ধাঁচে
সবাই ছুটে চলে
ঘাম সাগরে ছন্দ বুনে
দুঃখের কথা বলে।
স্বপ্ন দেখি ভালো থাকার
স্বপ্ন সদা বুনি
ভুবন মাঝে প্রতি ক্ষণে
আপন মানুষ গুণি
১০/
বাঘ ও বিড়াল
বদরুল বোরহান
বিড়াল তো নয় বাঘের মাসী
পিসিও নয় মোটে,
বাঘ দেখলে বিড়াল মশাই
প্রাণ বাঁচাতে ছোটে।
বাঘ তো ডাকে হালুম-হুলুম
বিড়াল ডাকে মিউ,
স্বভাব এবং চাল-চলনে
ঠিক বিপরীত "ভিউ"।
বাঘ হলো খুব বদমেজাজি
বিড়াল সুবোধ প্রাণী,
বাঘ-বিড়ালে মিল খোঁজাটা
১১/
আসছে খোকন
গৌতম তালুকদার
এসো মানিক ভাত খেয়ে নাও
আর করো না দেরী।
দেখতে যদি চাও এসো তবে
ভীষন রেগে হালুম বলে
ডাকছে এক ডোরা কাটা বাঘ।
ঘরের পাশে ঘন জঙ্গলে তে
লাল চোখে করেছে নড়াচড়া
ওৎ পেতে আছে ধরতে শিকার
ভীষন ভয়ে কাঁপছে পশুরা
ইয়া শক্তি ডোরাকাটা দাগের।
তোমার সাথে পারবে কেনো
তুমিও যে ভীষন সাহসী
সময়ে খাবার খেয়েছো দেখে
বলবে গিয়ে বিড়াল মাসী
আসছে খোকন মারবে বাঘ।
তুমি রাজপুত্র রাজার কুমার
চাঁদের টুকরো ছেলে
আছে তলোয়ার তীর ধনুক
মারবে বেড়িয়ে এলে
পঙ্খিরাজ চড়ে যাবে তেপান্তর।
১২/
ভালো খারাপ
খোরশেদ আলম
খারাপ ভালো হয়না নামে
খারাপ ভালো কাজে
রাজা নামের মানুষ প্রজা
আছে ভুবন মাঝে।
দিনকে ভালো রাতকে কালো
কেমন করে বলো
সত্য প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি
আলোর পথে চলো।
বাতির নিচে আঁধার থাকে
নেইতো বুঝি জানা
চোখ থেকেও এই সমাজে
অনেকে আজ কানা!
বাজে লোকের কদর বেশি
এই কথা কি ভুল?
কার গলাতে পরাও মালা
কার হাতে যে ফুল!
যাচাই করো বাছাই করো
ভালো-কে কও ভালো
তবেই না হয় অবশেষে
দেখবে শুধু আলো।
১৪/
মোচন করো দূষণ
জাহাঙ্গীর চৌধুরী
এসেছিল মেঘ বালিকা
খুকুর সাথে দেখা।
জিজ্ঞেস করে খুকুকে সে
মুখে কিসের ছ্যাঁকা ?
খুকু বলে বৃষ্টি দাওনি
তাপের দর্প বেশি।
ঘামাচিতে মুখ ভরেছে
আসে না আর হাসি।
মেঘ বালিকা দুঃখ পেয়ে
খুকুর কাছে বলে।
গ্রীনহাউজ দূর্বল এখন
গাছ কর্তনের ফলে।
গাছ লাগিয়ে সারাদেশে
মোচন করো দূষণ।
দেখবে তখন নিয়মিত
বৃষ্টি হচ্ছে বর্ষণ।
১৪/
ইচ্ছে ত্যাগী
বায়জিদ ইবনে দেলোয়ার
আঙুল ধরে হাঁটতে শিখালে
উঁচু নিচু পথ চিনালে‚
ভালো-মন্দ সব যাচাইয়ে
তুমি কিন্তু পথ দেখাতে।
বাবা মানে ভালোবাসা
যে বুঝে সে করে না অবহেলা।
বাবা মানে শত ত্যাগী
তোমার‚ইচ্ছে পূরণে শক্তিশালী।
জীবন গড়ার উদ্যানাতে
পরিচর্যায় তুমি ছিলে।
তোমার জন্য সফল আমি
এর পিছনে রাত জেগেছ কত জানি?
বৃক্ষ হ'য়ে ছায়া দিয়েছ
বৃষ্টির ন্যয় ঘাম ঝরিয়েছ।
নিজে জ্বলেছ আমাকে বাঁচাতে‚
সে আগুনের জ্বালানি কাষ্ঠ নিজে হয়েছ।
১৫
মানুষ হওয়ার জন্যে
শংকর দেবনাথ
মা বলেছেন টিউ স্যারেদের রাখতে আমায় চাপে,
শুনেই আমার বুকটা শুধু ধুকপুকিয়ে কাঁপে।
বাবাও বলেন- হোমটাস্কটা একটু দিতে বেশি,
সময় যেন যায় পেরিয়ে করতে সেসব শেষই।
দিনরাত্তির পড়ার চাপেই আমার সময় কাটে,
পাইনে সময় - তাই যাই নে আর সে খেলার মাঠে।
পড়তে পড়তে ঘাড় ব্যথা হয় - লিখতে লিখতে হাতে,
স্বপ্ন দেখি ভয়ের সে কী! যেই বুজি চোখ রাতে।
ইস্কুলে যাই - বাসায় ফিরি - ভাত গুঁজে নাক-মুখে,
পড়তে বসি গড়তে জীবন- থাকতে মহাসুখে।
মনটা ফুঁপায়- নেই তো উপায়- সামনে ঘোরে ছড়ি,
মানুষ হওয়ার জন্যে শুধু হন্যে হয়েই পড়ি।
১৬/
স্বপ্নের আলিঙ্গন
মোঃ শরীফ উদ্দিন
হায় রে প্রীতি অতীত স্মৃতি
খুঁজে আজও মন,
আলিঙ্গনে স্বপ্ন রণে
উধাও বৃন্দা-বন।
নাই রে মনা আপনজনা
পাশে নাই রে কেউ,
দীর্ঘশ্বাসে নির্যাস গ্রাসে
হৃদে খেলছে ঢেউ।
কোন্ সে তাপে মনা চাপে
একাত্মে এ ঘর,
কেন্ রে গোপাল পোড়া কপাল
আপন কেনো পর?
খুঁজি আমি অন্তর্যামী
কাব্য পাতায় আজ,
মানব দোরে কেনো ঘোরে
আসক্ততার সাজ।
জগৎ কৃত্তে ভাবায় নৃত্যে
অতীত টেনে সই,
বৃন্দাচড়ে একলা ঘরে
দুঃখ বলি কই।
১৭/
ছয় ঋতুর দেশ
রেজাউল করিম রোমেল
আমাদের এই বাংলাদেশ
ছয় ঋতুর দেশ,
শস্য শ্যামল ফসলে ভরা
রূপের নেইকো শেষ।
গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত
কত বাহারি ঋতু,
আরো আছে শীত বসন্ত
জেনে নাও হেতু।
কত বাহারি রূপ যে আছে
আমার বাংলাদেশে,
প্রতি বছরই ছয়টি ঋতু
বার বার ফিরে আসে।
১৮/
কোনো একদিন
ফারজানা ইয়াসমিন
কোনো একদিন চলে এসো বিভেদ ভুলে,
নীল নকশার সীমানা ছাড়িয়ে।
পরিপূর্ণ না হোক,অপূর্ণতা নিয়ে
নীল আকাশের নিচে একটা ছাঁদ হবে।
গোধূলি বেলায় পাখিদের ঘরে ফেরার ব্যাকুলতা দেখে,
তোমার মনেও হবে আমার কাছে আসার আকুলতা।
নিশীথের অন্ধকারে ডুবে যাবো দু'জনে জ্যোস্নার আলো হয়ে,
নির্ঘুম রাতের স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী হবে হৃদয়ের ঘরে।
যেমন করে সকালের শিশিরের গায়ে রোদ এসে ছোঁয়া দিয়ে যায়,
ঠিক তেমন করে ছুঁয়ে যাবে আমায়।
মুক্তার দানার মতো জ্বলজ্বল করবে আমার দু আঁখি,
তোমার ভালোবাসায় পূর্ণতা পেয়ে।
সব লাজলজ্জা ভুলে গিয়ে আমি যাবো তোমার দুয়ারে,
নিখিল জগৎ ছোট হবে তখন ছোট কুটিরের কাছে।
আমি সব জড়তা ভুলে প্রতীক্ষার করবো অবসান,
সমাজের সব মিয়ম কানুন হবে সেদিন ম্লান। আগারগাঁও, ঢাকা
১৯/
খাব ফল
আল আমিন মুহাম্মাদ
মধুমাসে
খাব ফল
গায়ে বেশি
পাব বল
ফলে আছে
ভিটামিন
খাব তাই
প্রতিদিন।
২০/
একটা পিঁপড়ে
দিলীপ কুমার মধু
আকাশেতে উড়ছিল একটা পিঁপড়ে
নিচের দিকে তাকিয়ে বলে --কতো ডিপ্ রে,
এতদুর উড়বো ভাবি নি তো কখনো
ভেবে দেখা যাবে পরে যা হবে তখনো,
প্র্যাকটিস করে করে আজ আমি আকাশে
কত স্মৃতি মনে পড়ে ভেসে ভেসে বাতাসে,
মেঘগুলি কথা কয় গায়ে গায়ে ঘেঁষে
বেশ আছি, বেশ আছি মেঘেদের দেশে,
হাওয়া কানে কথা কয় ফিস্ ফিস্ করে
মনে ভাবি এই বুঝি পড়ি মরি ঝড়ে,
নিচু হয়ে তাকিয়ে দেখি সবকিছু
পিঁপড়েরা যায় দেখি পিছু পিছু পিছু,
ভারি মজা, ভারি মজা কাজ কাম নেই
আকাশেতে উড়ে উড়ে নাচি ধেই ধেই,
ঠিক তখন একখানা বরফ পড়ে ঘাড়ে
নিচের দিকে পড়তে থাকে ঘুরে বারে বারে,
মাথা ঘুরে পড়ে যায়-- মাটিতে ঠোকা
এত গর্ব ঠিক নয়-- ওরে ওরে বোকা।
২১/
সোনাই
মোঃ শরিফুল ইসলাম
সোনাই ছুটে ভোর বেলাতে
মাঠের কাজে,
বাড়ি ফেরে কাজের শেষে
নিত্য সাঁঝে।
কাজকে আপন ভাবে সোনাই
দেয় না ফাঁকি,
ওরই সাথে উঠে জেগে
ভোরের পাখি।
সোনাই হলো এই গেরামের
ভালো ছেলে,
দিবানিশি খুশি থাকে
অল্প পেলে।
সবাই ওকে অনেক বেশি
ভালোবাসে,
ওরই মুখে আসমানের চাঁদ
যেনো হাসে।
সবার চেয়ে জানে বেশি
গ্ৰামের মানুষ,
যখন ইচ্ছে উড়ায় সোনাই
খুশির ফানুস,
২২/
মৃত্যুর ডাক
তাপস কুমার বর
আমার মৃত্যুতে হবে একদিন নিবন্ধ
বুক চিরে দেখো,
শত শত ক্ষত!
হারিয়ে যেতে যেতে একদিন
হবে মৃত্যুতে সমাপ্ত।
কোথায় সেই প্রস্তস্থ রাস্তা?
চলার পথ হয়েছে সংকীর্ণতা,
নীরব শ্রোতা এখন...
ক্ষতকে প্রলেপ দিতে পারিনা।
নিভৃতে এখনো কাঁদো কেন?
বলতে পারো ক্ষত!
অনেক সংগ্রাম হারিয়ে গেছে,
পড়ে আছে শুধু মৃত্যুর শবদেহ।
কবে আসবে সমাপ্ত?
নীর্জনের মতো
পাতার খসখসানি শব্দে,
মৃত্যু তুমি আসবে তো?
আমার সংগ্রাম হয়ে গেছে মৃত,
যার মূল্য নেই "সে না কি অভাগা শব্দ"?
শুধু তুমি বুঝবে মৃত্যু,
আমি তোমার অপেক্ষার
সেই একটা অভাগা শব্দ!
২৩/
দুটি ছড়া
রথীন পার্থ মণ্ডল
১. রসময় মান্না
রাশভারী লোক ছিল রসময় মান্না
একদিন ভোজ খেয়ে কী ভীষণ কান্না !
আজকাল ভোজবাড়ি তিনি আর যান না
টিভি দেখে নানা পদ করে যান রান্না।
হেসে বলে, দেখেছেন চুনী আর পান্না !
রসময় গান শোনে, রফি আশা মান্না
খুশি ছাড়া জীবনেতে তিনি কিছু চান না
হাসি খুশি মনে করে তিনি ঘরকন্না।
ভোর হতে প্রাণায়াম হাসি রাশি বন্যা
গাড়ি ছেড়ে পথে হাঁটে রসময় মান্না
খেতে চান ভালো পদ অপদ হলে যান না
রসময় গুণ ধরে, করে বেশ রান্না।
গান গায় গুণ গুণ, ভুলে গেছে কান্না
হাসি মুখে মন জয় রসময় মান্না।
২. রজত দাদা
মনের দেশে মনের কোণে
বসে আছেন তিনি,
সবার প্রিয় মানুষ উনি
রজত নামেই চিনি।
হৃদয় ছিল মস্ত বড়
ছিল সরল সাদা,
খেলাধূলা বাসত ভালো
প্রিয় রজত দাদা।
হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল
অজানা এক দেশে,
আজও তাকে খুঁজছে সবাই
মেঘের ভেলায় ভেসে।
নাম শুনেছি লায়েকদার কাছে
মনটা ছিল ভালো,
এমন মানুষ কোথায় পাবো
জ্বালবে শুধু আলো ?
শশীভূষণ বোস রোড
রাধানগর পাড়া
পূর্ব বর্ধমান
পশ্চিমবঙ্গ
ভারতবর্ষ
২৪/
বোশেখ জ্যৈষ্ঠে
মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর
শেরপুর, বগুড়া।
বোশেখ জ্যৈষ্ঠে গাছে গাছে
হরেক ফল'ই পাঁকে,
ফল খেতে তাই শিশু-কিশোর
চড়ে গাছের শাঁখে।
এডাল ওডাল ঘুরে তারা
খোঁজে গাছ পাঁকা ফল,
পাঁকা ফলের লোভে তাদের
চোখ করে টলমল।
ব্যাগ ভরে পাঁকা ফল পেরে
দেয় যে বুবুর বাড়ি,
সবাই মিলে খাবে ওই ফল
ভরে থালা হাড়ি।
আর খেতে দেয় ছিন্নমূলে
গরীব শিশুর দলে,
ধনী গরীব সবাই সমান
কোরান হাদিস বলে।।
২৫/
বর্ষার আনাগোনা
সাইদুল ইসলাম সাইদ
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ যাচ্ছে চলেই
আষাঢ় নিচ্ছে খোঁজ,
ইচ্ছে মতোন থাকবে নিজেই
নিচ্ছে খবর রোজ।
সকাল বেলায় একটু এসেই
যাচ্ছে চলেই সে যে,
নিশিতেও আসে হঠাৎ করেই
রিমঝিম ধ্বনি বাজে।
তার ছোঁয়াতেই শীতল শরীর
একটু আরাম লাগে,
বর্ষার দিনে বই পড়িতেই
ভীষণ স্বাদ যে জাগে।
২৬/
ভালোবাসার বাঁশি ফেরত
কিশোর-হারুন
বলেছিলে উপহার দিয়ে এই বাঁশি
সুর বেধে দিও মোরে রবো পাশাপাশি।
কাধে তোর মাথা রেখে শুনে যাবো এই
বরষার রংধনু কিবা ফাগুনেই।
আকাশের মেঘ চুয়ে পড়ে ভালোবাসা
সেই মেঘে লিখে দিবো জীবনের আশা।
বলেছিলে খুব করে এসে এই নীড়ে
খেয়ে বড় খুশি হবে টক দই চিড়ে।
প্রহসন ছিলো সেটা ছিল বড় ধাঁধা
সবাই কী হতে পারে পদাবলী রাধা!
গোলাপটা শুকিয়ে যে হয়ে গেছে ফিকে
এককালে ঘ্রাণ তার ছিল দিকে দিকে।
কী থেকে কী হয়ে গেল একদিন রাতে
সেই বাঁশি ঘুরে ফিরে তোমারই হাতে।
শত চেষ্টায় বাঁশি ফিরলো না শেষে
মন তবু ভিজে আজ কতনা আবেশে।
অভিমানে আছো আজ দূর বহুদূর
বাঁশি থেকে ক্ষয়ে গেলো তাল লয় সুর।
২৭/
জুন, ২০২৩ সংখ্যার জন্যে--
মুরগি ছানা
বদরুল বোরহান
মুরগি ছানা "কিউটি"
নাম হলো তার বিউটি,
ডাকে টিউ টিউ-টি।
নাম রেখেছে প্রিয়তি,
তোমার-আমার খাবার হবে
এটাই যে তার নিয়তি।
২৮/
মশগুল
শামীম শাহাবুদ্দীন
বাউলা বাতাসে উড়ে মেঘকালো চুল
বাহারী চুলের প্রেমে ধরা মশগুল
কমলার কোয়া যেন গোলাগী ও ঠোঁট
হেসে উঠে আঁখিদ্বয় হয়ে একজোট।
বাঁশের বাঁশির মত সরু ওই নাক
তাই দেখে আঁখি দুটো বড় নির্বাক
টোলপড়া দুই গাল কী যে লালে লাল
প্রেমিকের মন মজে তাতে চিরকাল।
দুধসাদা দাঁতে তার ভারী কারুকাজ
মুক্তোর দানা ঢাকে দু'ঠোঁটের ভাজ
মাখন সদৃশ তনু লাজ রাঙা হাসি
ষোড়শীর ঠোঁটে লেগে থাকে বারোমাসি।
দুটি চোখ যেন তার চঞ্চলা পাখি
চোখ ইশারাতে সে যে করে ডাকাডাকি
কাছে ডেকে পলকেই দূরে সরে যায়
মরিচীকা ভেবে মন করে হায় হায়!
সুদৃশ্য পাহাড়ের খাড়া দুটো চূড়
ওইখানে সুধা আছে কি যে সুমধুর
খোলে যাক হেরেমের গোপনীয় দ্বার
বৈশাখী ঝড়ে সব হোক মিসমার!
২৯/
বর্ষা
প্রান্ত দত্ত
গ্রীষ্মের প্রচন্ড উত্তাপে প্রকৃতি হয় দগ্ধ,
গাছপালা,পশুপাখি,মানব অসহ্য তীব্র তাপদহনে
করতে থাকে ছটফট;
তখনই ধরণীতে আবিভূত হয় বর্ষা ঋতু।
আকাশ জুড়ে শুরু হয় কালো মেঘের ঘনঘটা
মেঘাচ্ছন্ন আকাশে বিজলি চমকায়,
দিনভর অবিরাম ঝরতে থাকে বৃষ্টি,
কখনও ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি,কখনও ভারী বৃষ্টি
বর্ষার পানিতে নদী খাল-বিল হয় পরিপূর্ণ ভরপুর।
চারিদিকে থৈ থৈ করে পানি,
জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে নৌকা ভাসায়
মাঝিরা মধুর সুরে ভাটিয়ালি গান গায়,
কদম,কেয়া ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি,
এভাবে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে বর্ষা ঋতু।
৩০/
বাংলা ভাষা
মানিক লাল সাধু
যে ভাষাতে মায়ের বুলি
মায়াভরা নরম তুলি
হৃদয় হরা গান শুনে
মনের দুঃখ কষ্ট ভুলি ।
যে ভাষাতে পড়তে শিখি
সে ভাষাতে নাটক লিখি
মূল্যবোধের আলোকে ধারায়
মানুষ হবার স্বপ্ন দেখি।
যে ভাষাতে সারা জনম
ভালোবাসার স্বপ্ন আঁকি,
সে ভাষাকে জীবন দিয়ে
বুকের মাঝে আগলে রাখি।
সে ভাষা তো বাংলা ভাষা
প্রাণের ভাষা, অতি খাসা,
ধনী-গরীব কামার চাষা
সবার মনের পুরায় আশা।
৩১/
কালবৈশাখী ঝড় ও কুড়ানো আম
মো. সুমন মিয়া
কানে মুখে হচ্ছে কথা
নিচু করে স্বর,
ঈশান কোণে মেঘ জমেছে,
আসতে পারে ঝর।
জদু, মধু তৈরী থাকিস
আকাশ হলে কালো,
দমকা হাওয়া বইছে, বুঝি-
বিজলী চমকালো।
সবাই যখন দৌড়ে যাবে
নির্বিঘ্নে ঘর পাণে,
আমরা হাজির হবো ‘হুসেন
দাদুর’ আম বাগানে।
কালবৈশাখীর ঝরে পড়বে
টাপুস টুপুস খসে,
কাঁচা পাঁকা আমের স্বাদে
ভরবে মুখ টসটসে।
যতোই বেদম বৃষ্টি পড়ক,
ধূড়ম ধূড়ম গর্জে,
ভয় পাওয়ার নেই কোন কারণ
তুমুল বাদলা, বজ্রে।
আম কুড়োব এত্ত বেশি
পকেট, কোঁচড় পুড়ে।
দু’হাত ভরে যত্ত খুশি
নিয়ে যাবো ঘরে।
যতোই বিপদ আসে আসুক,
হব না পিছ পা,
ফিরলে ঘরে, পড়বে জানি
পিঠে দশ বেত ঘা।
৩২/
বৃষ্টির দিনে
নবারুন কান্তি বড়ুয়া
বৃষ্টি পড়ে সকাল থেকেই
থামবে কবে বলো,
সূর্য্যি মামা রাগ করেছে
রাগ ভাঙাব চলো।
ঐ মেঘেতে লুকিয়েছে
না দিবে আজ দেখা,
ঠিক করেছে পেরোবে না
মেঘের সীমারেখা।
কথা ছিল সবাই মিলে
খেলব লুকোচুরি,
বৃষ্টি কাদায় ভেঙে গেল
মনটা পুরোপুরি।
বৃষ্টি তবে মিষ্টি লাগে
রিম ঝিমাঝিম শব্দে।
বৃষ্টিদিনে মাকে রাখি।
মিষ্টি ধাঁধাঁর জব্দে।
৩৩/
মেঘ জমেছে
মুহাম্মদ মুকুল মিয়া
আকাশ জুড়ে মেঘ জমেছে
ডাকছে গুরু দেয়া,
ভয়ে ভয়ে কাঁপছে মাঝি
নেইকো কোনো খেয়া।
একটু পরেই ঝড় উঠিবে
যাচ্ছে পাখি নীড়ে,
কালো মেঘের কুন্ডলীতে
আকাশ গেছে ঘিরে।
পাকা ধানের আটি নিয়ে
দিচ্ছে কৃষক দৌড়,
কালো মেঘের ধোঁয়া এসে
ঘনিয়েছে ঘোর।
সবার মনেই শঙ্কা জাগে
আজকে কীযে হয়,
মায়ের পরান দুরুদুরু
লাগছে ভীষণ ভয়।
৩৪/
বাঘের সাঁতার শেখা
শাজাহান কবীর শান্ত
সাঁতার শেখা দারুণ সোজা
শিখতে গেলো বাঘ
খুব দ্রুত শিখতে গিয়ে
ভিজলো ডোরাদাগ!
শিখতে সাঁতার ডুবলো মাথা
তাই করে হাঁকডাক
গোঁফ ভিজে তার বিঁধলো বিশাল
পুঁটিমাছের ঝাঁক।
সাঁতার কোথায়! ডুবলো বাঘের
পুরো শরীর-পা
একদিনে কী যায় রে শেখা!
শিখতে যাবো? না!
৩৫/
৩৬/
খোকা যাবে ঢাকা
বিজন বেপারী
আজকে খোকার খুশি ভীষণ
ঢাকায় যাবে বাসে,
এয়ার কুলার বাসটা হবে
সিটটা জালনার পাশে।
বরিশাল থেকে গৌরনদী
মাদারীপুর ভাঙ্গা,
চিনেবাদাম ছোলা খেয়ে
হবে খোকা চাঙ্গা।
এমনি করে গাড়ি যাবে
পদ্মা সেতুর মাঝে,
চোখ দুটো তার স্বার্থক হবে
তাইতো খোকা সাজে।
শো শো করে চলছে গাড়ি
বিমানের সেই ছোঁয়া,
ঢাকায় যাবে খোকাবাবু
সকলের চায় দোয়া।
৩৭/
কিছু শিশু দুঃখী কেন
অরুণ বর্মন
একই শিশু একই শৈশব
একই গড়ন জাত
কেউবা খাচ্ছে ফিরনি পোলাও
কেউবা ফেলনা ভাত।
কেউ ঘুমাচ্ছে দালান-কোঠায়
থাকছে রাজার হাল
কেউ ঘুমাচ্ছে পথের পাশে
কাঁদছে হাজার কাল।
কেউবা যাচ্ছে স্কুল কলেজ
ঘাড়ে নিয়ে বই
কেউবা শ্রমিক মিল গ্যারেজে
কেউবা টানছে মই।
কোমলমতি শিশু যখন
খিলখিলিয়ে যায়
পথের পাশে টোকাই অনাথ
ফ্যালফ্যলিয়ে চায়।
কিছু শিশু দুঃখী কেন
মনটা ক্লেশে ভার
কবে হবে সকল শিশুর
সমান অধিকার।
৩৮
বর্ষা
কিশোর পণ্ডিত
শন্ শন্ বাতাসে ঘন ঘন বীজলায়
নীল আকাশ কালো হয় মেঘেদের ইশারায়।
কদম- কেয়া ফোটে ভেজা ভেজা সুবাসে
রিমঝিম বৃষ্টিতে আকাশটা ফ্যাকাশে।
ময়ূরী পেখম মেলে সাথে নাচে পাখিরা
নবধারা জলে খেলে মীন আর ভেকেরা।
চাতক- চাতকী থাকে বাদলের ভরসায়
জলদের জলে তারা আপনার প্রাণ বাঁচায়।
বলাকার সাদা দল নীড়ে চলে সাঁঝেতে
ভেজা কাক কেঁদে মরে হিজলের শাখাতে।
অরুণের তাপে হয় তৃষিত ধরাতল
তৃষিতের তৃষা মেটায় আষাঢ়ের ভরা জল।
খোকা-খুকু ভেসে যায় কদলীর ভেলাতে
জলকেলি করে তারা শ্রাবণের ধারাতে।
নীরদ নীরে মনের সুখে কৃষক করে চাষ
ধীবর জালে ধরা পড়ে নানা জাতের মাছ।
৩৯
তুলনা
রুকসানা আফরোজ
বাবুই পাখিরা থাকে সবে মিলে দলে
তাল তমাল বনের উঁচু শির তলে,
শিল্পের ছোঁয়া লাগে সে ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে
রোদে জলে মাখামাখি বাতাসেতে নড়ে।
কাঁচা ঘরে কারুকাজ একান্ত আপন
চিরসুখী নিজগৃহে অনন্ত যাপন,
যুগ যুগ ধরে তারা প্রকৃতির ধারে
নিজঘরে একমনে যেনো ওতপ্রোত ভারে।
চড়াই বাধিঁছে বাসা অট্টালিকা পরে
বৃষ্টি ঝড়ে তারা কভু নাহি কষ্ট করে,
পরের ঘরে আশ্রিতা তবু ভাবে সুখী
ঝেড়ে যদি ফেলে দেয় হবে চির দুখী।
দুরুদুরু কাপে হিয়া তবুও বড়াই
ক্ষণিকের পাকা ঘরে সত্তার লড়াই,
স্বাধীনতা আছে যার অহংকার নাই
ভাড়াবাড়ি রোষানলে ক্ষণিকের ঠাঁই।
৪০
জ্ঞানপাপী
হাফিজুল ইসলাম লস্কর
জ্ঞান দন্ড মুর্খের হস্তে
চারিদিকে নয় ছয়,
অযোগ্যতায় ছলচাতুরী
উদ্ভট অভিনয়।
অর্থ নাড়ে ফাগুন কাঠি
জ্ঞানীর চোখে জল,
ব্যাথার ঝড়ে লন্ডভন্ড
সমাজ হ য ব র ল।
দুর্বিষহ বিষাদ অতীতে
হারিয়ে যাবার ভয়,
কৃত্রিমতার আস্ফালনে
সভ্যতারই ক্ষয়।
হারাম কর্মে আরাম খুঁজে
মিথ্যা জারিজুরি,
ভন্ড ভুষিত সাধুর সম্মানে
চোরের বাহাদুরি।
দুঃশীল দাপট সুশীল নামে
সুশীল রসাতলে,
জনতার হক লোপাট করে
ছলাকলা কৌশলে।
জ্ঞানপাপীর মিথ্যা চাদরে
গোলকধাঁধার ফাঁস,
জ্ঞানের চাদর ধুলায় লুঠায়
অজ্ঞতায় সর্বনাশ।
৪১/
অনুরোধ
ভীষ্মদেব মণ্ডল
অসৎ পথে অধিক আয়ে
বিত্তশালী হয়ে,
যেসব লোকে আছেন সুখে
বৌ - বাচ্চা নিয়ে।
তাদের কাছে খুব বিনয়ে
এ অনুরোধ হলো ,
খারাপ পথে সুখ আসেনা
ন্যায়ের পথে চলো।
৪২
রূপসী জননী
মাহফুজ ইমরান
দার করে তর এত সাজসজ্জা!
উঠবি নাকি বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায়?
এ দিকে তর সন্তানেরা ক্ষুধার্ত হাহাকার বুকে
ঘুমিয়ে পরেছে রাস্তার'পরে।
তকে কে দেবে অস্কার?
তর সন্তানেরা দেয় শত শত দিককার।
চারদিকে আর্তচিৎকার!
তকে সাজাতে তর ছেলেরা দেশান্তর,
প্রিয়জন ছেড়ে দীর্ঘ সময় দূরে।
তোকে সাজাতে রৌদ্রে পুরে কৃষক
দিনমজুর ক্লান্ত হয়ে গাছ তলাতে বসে,
তর সন্তান অসুস্থতায় মরছে ধুঁকে ধুঁকে! শিক্ষাহীনতায় ঘুরছে দেশে দেশে।
ঘর নাই বলে ফুটপাথে
তুই ভাবছিস জিতে গেছিস,
শত বার হেরেছিস সন্তানের কাছে।
তবু তর নেশা কাটেনি
সাজসজ্জার কত অভিনভ চেষ্টা।
তর ছেলেমেয়ে টিফিন বক্স হাতে
ছুটছে দর-বিদরে,
নোনা জল পরছে পাহাড় পর্বত বেয়ে,
তুই যাচ্ছিস মা স্বার্থপরের মতো ভিজে।
৪৩/
দুখু মিয়া
বিভাস গুহ
ছিল না তো জাত ভেদাভেদ
গরীর কিংবা ধনী
তাইতো আজও সবার কাছে
তুমিই চোখের মণি।
মানুষ হয়ে মানুষেরই
দিলে প্রাপ্য সম্মান
গান কবিতায় গেয়ে গেলে
মানবতার জয়গান।
বিদ্রোহের সুর তোমার কন্ঠে
অন্যায়ের বিরুদ্ধে
অত্যাচারী রুখতে গিয়ে
নামলে মাঠে যুদ্ধে।
গজল শ্যামার গানে গানে
পাই যে মধুর সুর
অন্তরেতে আছ তুমি
নয়তো একটুও দূর।
চুরুলিয়ায় জন্ম তোমার
দুখু মিয়া নাম
দেশ বিদেশে ছড়িয়ে আছে
খ্যাতি আর সুনাম।
৪৪
আবহমান পল্লি পট
সাবেকুন নাহার মুক্তা
শাখে শাখে কিচিরমিচির
চড়ুই পাখির স্বর,
ঘুম তাড়িয়ে আঁখি মেলে
দেখি রঙিন ভোর।
পূব আকাশে আলোর রবি
সোনা বরণ রং,
দোলে দোলে নদীর জলে
তুলে নাচন ঢং।
ঝিরিঝিরি শীতল বায়ু
ফুলের বনে বয়,
ফসল ভরা মাঠের সনে
মনের কথা কয়।
ঊর্মি তালে নায়ের মাঝি
ভাটিয়ালি গাঁয়,
গাঁয়ের পথে কৃষান বধু
চলে রাঙা পায়।
আবহমান পল্লি পটে
আঁচড় কাটে মন,
রূপীয়সী বাংলা ভূমে
অমূল্য সে ধন।
৪৫
মায়ের মুখ
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
জন্ম নিয়ে প্রথম আমি
যার দেখেছি মুখ,
ভাবতে গেলে গর্বে যেন
তাইতো ভরে বুক।
ছোট থেকে করলো বড়
আদর সোহাগ দিয়ে,
কাঁদলে পরে চুপ করাতো
অমনি কোলে নিয়ে।
বড় হলে মানুষ হবে
বলবে সবাই ভালো,
এই ছেলেটি জগৎ জুড়ে
জ্বালবে নতুন আলো।
মনের ভেতর স্বপ্ন ছিল
বলতো কথা কত,
সেই মানুষটি হারিয়ে গেছে
দুঃখ আজ যত।
সেই মানুষটি আমার মা যে
আর পাবো না ফিরে,
বুকের ভেতর শোকের পাথর
সবই মাকে ঘিরে।
৪৬
ঢিল মেরো না
নুরুল হুদা নুরী
লোভের বশে পরের গাছে
ঢিল মেরো না ঢিল,
ধরা খেলে পিঠের উপর
মারবে জোরে কিল।
কিলের জোরে বুঝবে খোকা
আপন কাজের ভুল,
চুরি করে ধরা খেলে
দিতে হয় মাশুল।
লজ্জা পাবে সবার কাছে
দিবে শত ধিক,
বুঝবে তখন সব হারিয়ে
কাজ করোনি ঠিক।
ধরা খাবে শেষ বিচারে
কিয়ামতের দিন,
শাস্তি দিবেন আল্লাহ্ মহান
কঠিন আর কঠিন।
তাই খোকারা চুরি থেকে
হও বেশি সাবধান,
এক চুরিতে ধরা খেলে
থাকবে না আর মান।
অণুগল্প
৪৭
চক্ষুলজ্জা
নাজমুল হাসান নকিব
ক্লান্ত বিকেল, কলম হাতে আমি অনবরত সামনে অগ্রসর হতে হতে পৌছে যাচ্ছি প্রস্থ বরাবর পৃষ্ঠার শেষ অংশে। এপাশ ওপাশ করে ক্রমাগত আচড় কেটেই যাচ্ছি। আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে অনেক্ষণ ধরে। দেখে মনে হচ্ছে মুখ কালো করে আছে- অনেকটা রাগ, অভিমান, দুঃখ, অসহায়ত্ব আর হতাশায় মুখ অন্ধকার করে রাখা কোনো গৃহবধূর মতো। শাশুড়ীদের ভাষায় একে মুখে চাল ভেজানো বলে। বউয়েরা মুখ অন্ধকার করলে শাশুড়ী রা বলে মুখে চাল ভিজাইছে। সবাই বলে কিনা জানি না। তবে, আমার দেখা সবাইকে বলতে শুনেছি।
আকাশটা ওভাবেই মুখ অন্ধকার করে আছে। ভেতরে চাপা অসংখ্য কষ্ট প্রতিনিয়ত চোখের জল হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু চক্ষুলজ্জায় তা আর হয়ে উঠছে না। অতঃপর হঠাৎ করেই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো- ঝুপ করে বৃষ্টি হয়ে নেমে পড়লো শত-দুঃখের চোখের পানি।
হেঁটে- হেঁটে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম, বাড়ান্দার গ্রিল টপকে হাতটা ক্ষাণিক বাড়িয়ে দিলাম। দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি এসে হাতে পড়লো। পরক্ষণেই আমার উপস্থিতি টের পেয়ে মেঘ কান্না করা বন্ধ করে দিলো চক্ষু লজ্জার ভয়ে। মেঘ তখনো চোখের বাকি জল মুছতে ব্যাস্ত, আমি আবার টেবিলে এসে বসলাম, হাতে কলম নিয়ে আবারও তীব্র এক প্রতিযোগীতায় নামতে হবে।
নেহায়েত চক্ষুলজ্জার ভয়ে এই জগতে কতো কান্না চাপা পড়ে থাকে, কতো আহাজারি ভাষা পায় না, কতো হারিয়ে যাওয়া ফিরে আসে, কতো অভিমান গতি পায় না, নিরবে নিবৃতে আড়ালে একাকী দিন যাপন করে, কতো অপরাধের প্রতিবাদ হয় না, কতো কথার সঠিক জবাব হয় না, কতো সম্পর্ক ফাটল ধরা নিয়ে টিকে থাকে, কতো সংসার ভাঙ্গে না, কতো মানুষ না খেয়ে থাকে।
আবার এই চক্ষু লজ্জার অভাবে কতো মানুষ অমানুষ হয়!
_________
৪৮
মিড ডে মিল
মিঠু বিশ্বাস
-----------------
গজব ছড়াবেন না!! বলতে বলতে বিরক্ত বোধ করে হেডমাস্টার অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন
একটা বিষাক্ত ঢেকুর গিলে মেঘনা ম্যাডাম বেরিয়ে যাচ্ছে ।অফিসের দরজা যেন তাকে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে দূরে,
স্কুলের ক্লাস রুম বই খাতা চক ডাস্টার .. তার মেধা ইচ্ছা শক্তি সব যেন তাকে দেখে হাসাহাসি করছে , কিছু অসামাজিক ইঙ্গিত তার শরীরে হাত বুলিয়ে সান্তনা দিচ্ছে ।
বাড়িতে খাবাররে থালা সামনে আসতেই যেন চমকে উঠলো মেঘনা যেনো এই
কান্না করতে করতে ছোট্ট মেয়েটা বলবে তার খাবারের থালাটি পড়ে গেছে ...মাটিতে বা হোম ওয়ার্ক করতে না পারায় অঙ্কের শিক্ষক চক গসে দিল বুকে । আর যে মেয়েটা
স্কুলে এসে রিতুমতি হয়ে পড়ল .. কি না সে কেলেঙ্কারিটা ।
অন্যদিকে
ভেসে ওঠে বিড়ির ধোঁয়া গাজার ধোঁয়া ধোয়াই যেন এক উতাল সমুদ্র -
দ্রুতগতিতে দখল করে নিচ্ছে স্কুল হাবুডুবু খাচ্ছে এক প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। আর এই আদান প্রদানের মাধ্যম হচ্ছে মিড ডে মিলের খাবার ফলমূল ডিম এমনকি স্কুল থেকে পাওয়া খাতা কলম ও.. অন্য ক্লাসের ছেলেমেয়েদের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে দুইএকটা সিগারেট বা কিছু বিড়ির বিনিময়।
ইদানিং স্কুলে
ড্রপ আউটের সংখ্যাও অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠেছে।
ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েরা লজেন্স চুষার জায়গায় গর্ভনিরোধ গুলি চুষে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
মেঘনার ঘুম নেই বুকের বোঝাটা অনেক ভারী হয়ে যাচ্ছে
কিছু বলতে চাইছে বরকে বিড়বিড় করে বলল শব্দ ফুটে উঠল না ঘুমানো সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ যেভাবে চাষী বন্যার জলে শস্য দানা ডুবে যাওয়া দেখে।
৪৯/
দাদা, নাতী ও ভূত
মজনু মিয়া
দাদার সাথে মাছ ধরতে গেলো মজু,মজুর খুব সখ সে মাছ ধরা দেখবে তাই দাদাকে ধরে সাথে গেলো।নওলি বিলে গেলো মাছেরে,বিলে কয়েকটা বড় বড় বট গাছ আছে, দেখতে ছাতার মতো দেখা যায়।
বট গাছ থেকে তিনশ মিটার দূরে একটা উঁচু জায়গা সেখানে বর্শি দিলো বেলা থাকতেই।
ধীরে ধীরে রাত হলো,দুটি মাছ ধরলো দেখে মজু খুব খুশি হলো আর দাদার সাথে মাছের গল্প করে, রাত যখন গভির হলো বট গাছের ঐ দিকে কুকায় কাঁদে মনে হয় বুড়ি হবে, হঠাৎ দেখে একটা হারিকেন নিয়ে মনে হয় কেউ একজন নড়চড়া করে!
মজু বলে দাদা ওখানে কে কে যেনো মাছ ধরে মনে হয়, তাই না? দাদা কিন্তু জানে আর কেউ মাছ ধরতে আসে নাই এটা নিশ্চিত মাইছ্যা ভূত হবে! নাতীকে বলে না কারণ নাতী ভয় পাবে এ জন্য।
অনেক সময় আর কিছু বলে না কোনো সারা শব্দ নাই,ঘন্টা খানেক পরে মনে হলো বট গাছের ঐ দিকে যে বর্শি তাতে বড় একটা মাছ ধরেছে নাতী বলছে চলো দাদা মাছ ধরে নিয়ে আসি। দাদা বুঝলো এটা মাছ না নিশ্চয় এটা ঐ ভূতের কাজ হবে।তাই দাদা বলল নারে মাছ মনে হয় ছুটে গেছে।কিন্তু না আবার ছটপট ছটপট করলো এবার আর সন্দেহ নাই যে এটা মাছ নয় তাই নাতী দাদা দু জনে একসাথে মাছ ধরতে চলল।
গিয়ে সব কটা বর্শি খোঁজলো কিন্তু মাছ নাই তখন বট গাছে চেয়ে দেখে বিশাল এক মানুষ বুকের মধ্যে বড় বড় চোখ পা দু টা দু দিকে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে বিড়ি ছিলো থতমত করে একটা বিড়ি ধরালো নাতীকে সামলে ধরে তাড়াতাড়ি ছুটলো আগের জায়গায় শোনতে পেলো বিড়ি ধরালি রে নয়লে মাছ তোরে খাওয়াতাম।
নাতী কয় দাদা কে কথা কয়? দাদা কয় কেউ না আগুন জ্বালাতে হবে মশায় ধরতাছে তুই কি একটু ঘুমাবি নাতী কয় না দাদা আমি আরো মাছ ধরা দেখবো,,,আগুন জ্বালাতেই পানি খলোবলো করতে করতে বট গাছের দিকে কি যেনো গেলো তার একটু নাতী মজু দেখলো তা হলো বিশাল লোকের মতো গায়ে বড় বড় লোম মাথা নাই পানির উপর পা নাতী যে দাদার বুকের মধ্যে মাথা লুকালো আর বের করলো না মাথা তার
পর ফজরের আযান হলো বর্শি তুইলা চলে আইলো।নাতী মজু বলল দাদা ওটা কি দেখলাম রাতে? দাদা বলল নাতী ওটা মাইছ্যা ভূত!
মজু বলল দাদা রাতে মাছেরে আর যাবো না আমি।
৫০
গল্প
ভয়ার্ত সেই রাত!
আরিফুল ইসলাম
সুবর্ণপুর গ্রাম। গ্রামটিতে যতদূর চোখ যায় শুধু ঘন জঙ্গল,মাঠের পর মাঠ,গাছপালা, পুকুর -ডোবা আর শ-দুয়েক ঘর চোখে পড়ে। গ্রামটির আয়তন যতোটা বড়,সেই তুলনায় জনসংখ্যা এবং ঘরবাড়ি খুবই কম। ঘন জঙ্গল আর গাছপালায় ঢেকে থাকার কারণে গ্রামটিতে দিনের বেলা সূর্যের আলো পড়ে না বললেই চলে। এই গ্রামেরই ছেলে অয়ন। অয়নদের বাড়িতে ঢুকতে চোখে পড়ে -রাস্তার দুপাশে ঘন জঙ্গল। কিছুটা পথ গেলেই একটি বড় পুকুর এবং পুকুরের পাশে একটি বড় বটগাছ। গাছটি অয়নের বাবার দাদি রোপন করেছিল বলে শোনা যায়। এই গাছটিই অতিক্রম করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে হয় অয়নদের।
স্মৃতির পাতায় এমন কিছু স্মৃতি বা ঘটনা থাকে যা মানুষ ভুলতে চাইলেও তা কিছুতেই ভুলতে পারে না। বারবার সেই স্মৃতিগুলো স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। এই বটগাছটির কাছে আসলেই অয়নেরও ঠিক সেই রকমই কিছু স্মৃতি বারবার ভেসে ওঠে। যেটি সে আজ অবধি ভুলতে পারেনি। যে ঘটনাটি মনে হতেই তার গায়ে শিহরণ জেগে ওঠে,সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। মনে হয় কি যেন তাকে ডাকছে,অয়নের সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে।
ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে ঠিক ১০ বছর পূর্বে, শীতের সময় । অয়ন তখন কলেজের ছাত্র। কলেজের বন্ধুরা মিলে একদিন বনভোজনে যাওয়ার আয়োজন করে। নির্ধারিত দিনে চলে যায় বনভোজনে। কথাছিল সন্ধ্যা ৭-৮ টার আগেই চলে আসবে। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায়, যার কারণে সেদিন সেখান থেকে ফিরতে মধ্যরাত হয়।
শীতের রাত। তাই গ্রামের লোকজন সাধারণত রাতে খুব তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়ে। সেদিনও ঠিক তেমনটাই ঘটেছে। তাই চারদিকে ছিল নীরব,সুনসান পরিবেশ। কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক,মৃদু হাওয়া বইছে। মাঝেমধ্যে গাছ থেকে শিশির ঝরে পড়ার শব্দ আর হুতুমপেঁচার ডাক শোনা যায়। অয়ন সারাদিনের হৈ-চৈ আর আনন্দ-উল্লাস করে ক্লান্ত দেহ নিয়ে মধ্যরাতে বাড়ি ফিরতে থাকে। যেহেতু রাতে অয়নের একা একা চলার অভ্যাস নেই,তাই নিজের মনের ভেতর এমনিতেই একটা অস্বস্তিবোধ কাজ করছিল। কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকার কারণে মোবাইল ফোনের সামান্য আলোয় চারদিকটা যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। অয়ন ভয়ে ভয়ে ধীরে ধীরে পথ চলতে থাকে। নিজেই নিজের ভেতর সাহস জোগায়।
অয়ন যতটা পথ এগোয়,ততোই যেন ওর সমস্ত শরীর আরও ভারী হতে থাকে। রাস্তা যেন কমছে না। বাতাসের বেগ যেন আরও তীব্রতর হচ্ছে। অয়নের ভয়টা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। চারদিকের প্রকৃতি যেন ভয়ার্ত রূপ ধারণ করতে থাকে। হঠাৎই অয়নের সমস্ত শরীরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। অয়ন যেন ওর নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছে না। এ-কি! ওর দু-চোখ যেন ছানাবড়া হয়ে যায়। ও দেখতে পায় সামনে থেকে কি যেন একটা দৌড়ে আসছে। তার পুরো অবয়ব ও দেখতে পায় না। শুধু দেখে আগুনের ফুলকির মতো দুটো বড় বড় চোখ আর কালো অবয়ব। ঠিক যেন কালো বিড়াল! ছুটে আসছে অয়নের দিকে। পরক্ষণেই তা মিলিয়ে যায়। ভয়ে সমস্ত শরীর হিম হয়ে আসে। অয়ন যেন সামনে আর এগোতে পারছে না। পা দুটো মাটির নিচ থেকে কে যেন টানছে! তবুও বাড়ি যেতে হবে। তাই নিজের সর্বস্ব শক্তি সঞ্চয় করে সামনে এগোতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সেই পুকুরের কাছে এসে পড়ে। পুকুরের কাছে আসতেই অয়ন থ হয়ে যায়! বটগাছের ডালে চিৎ হয়ে ওর দিকে ভয়ার্ত রূপ নিয়ে তাকিয়ে আছে সেই চোখ! চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে আগুনের ফুলকি! চোখ দুটো বিশাল রূপ নিয়ে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। অয়ন দৌঁড় দিতে যায় কিন্তু দৌঁড় দিতে পারে না। চিৎকার করতে চায়। কিন্তু এ-কি! ওর কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে গেছে। মুখ থেকে টু-টা শব্দটিও বের হচ্ছে না। অয়ন কাঁপতে থাকে। এই বুঝি তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়! অয়ন যতবারই দৌঁড় দিতে চায়,ততবারই ব্যর্থ হয়। অয়ন অবয়বটির মুখ দেখতে পায়,বিকট অট্টহাসি আর বড় বড় দাঁত বের হয়ে আছে। ক্রমেই সে এগিয়ে আসছে অয়নের দিকে। অয়ন এখন কী করবে? ভেবে পায়না! মনে মনে আল্লাহর নাম করতে থাকে। দোয়া-দরুদ পড়তে থাকে। অবয়বটি আরও দ্রুত এগিয়ে আসতে থাকে। অয়ন এক পর্যায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
এক সময় ভোর হয়। ফজরের আযান দেয়। অয়নের বাবা ওজু করে মসজিদে নামাজ পড়তে যাবে, ঠিক তখনই বটগাছ তলায় অচেতন অবস্থায় অয়নকে পড়ে থাকতে দেখে। তিনি সেখান থেকে অয়নকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে নিয়ে যান। অয়নের জামাকাপড় পরিবর্তন করে বিছানায় শুয়ে দেন। এরপর তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে চলে যান। নামাজ শেষে মসজিদের হুজুরকে নিয়ে আসেন বাড়িতে। হুজুর দোয়া -দুরুদ পাঠ করে অয়নকে ঝাড়ফুঁক করেন, পানি পড়া খাওয়ান। এক সময় অয়নের জ্ঞান ফিরে আসে। ধীরে ধীরে চোখ খোলে অয়ন। মা'কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে এবং সব ঘটনা খুলে বলে।
সেদিনের সেই ঘটনা আজও অয়নকে ভাবায়। সেটি আসলে কী ছিল ? কোনো খারাপ জ্বীন, না-কি কথাকথিত ভূত নামের
৫১
বৃদ্ধাশ্রমের চিঠি
এ.আই রানা চৌধুরী
সকালবেলা ডাকপিয়ন এসে দরজায় টোকা দিতে শুরু করেছে। সুলতান সাহেব তখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। তার স্ত্রী কুলসুম বেগম দরজা খুলে চিঠিটি নিয়ে দেখলো খামের উপরে প্রেরকের নাম-ঠিকানা নেই। তাই তিনি রাগ করে সেই চিঠিটি সুলতান সাহেবের মুখের ওপর জোরে ছুড়ে মারলেন। সুলতান সাহেবও প্রেরকের নাম না দেখে খুব বিরক্ত হয়ে বালিশের নিচে রেখে দিলেন। এভাবে কয়েকদিন গেল। তারপর একদিন দুপুরবেলা সিগারেট খুঁজতে গিয়ে বালিশ উল্টালেন। চিঠিটা দেখে তার মনে পড়ে গেল কয়েকদিন আগের কথা। চিঠিটা বেশকিছুদিন আগে এসেছে অথচ খুলে পড়া হয়নি। চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলেন। চিঠিতে লেখা ছিল-
প্রিয় খোকা,
আশা করি ভালো আছিস, সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে আছিস। ভালো থাকারই কথা। যেখানে বৃদ্ধা মায়ের উৎপাত নেই। মায়ের সেবা করার জন্য সময় ব্যয় করতে হয় না। সেখানে তো অনেক ভালো ও সুখে থাকার কথা। আমার দাদুভাই ভালো আছে তো? ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমার কথা ভাবিস না, আমি বেশ সুখে আছি। এখানে যারা আমার দেখাশোনা করে তারা আমাকে খুব ভালোবাসে আর ঠিকমতো যত্ন নেয়। সময়মতো খেতে দেয়, ওষুধ দেয় আর গোসলও করিয়ে দেয়। ওরা আমাদের প্রতিদিন ভালো তরকারি দিয়ে খেতে দেয়। মাঝেমধ্যে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। গত মাসের ২৪ তারিখে আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। একটি ছেলে সারারাত জেগে আমার সেবা করেছিল। ও আমাকে আম্মা বলে ডাকে। আমিও ওকে এখন সন্তানের মতোই দেখি। মাঝেমধ্যে ওরা কয়েকজন আমার হাতে ভাতও খাইয়ে নেয়। মনে আছে তোর, ছোটবেলায় ভাত খেতে বললে তুই পালিয়ে যাস আর আমি হন্যে হয়ে তোকে খুঁজে বের করে খাইয়ে দিতাম। তুই মাছ খেতে খুব ভয় পাস তাই তোকে খাওয়ানোর সময় আমি কয়েকবার মাছের কাঁটা খুঁজে বের করতাম, যাতে একটি কাঁটাও তোর গলায় না লাগে।
তোর মনে আছে খোকা? আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম। সেই টাকা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলত না। তবুও আমি নিজে ঠিকমতো না খেয়ে টাকা বাঁচিয়ে সেই টাকা দিয়ে তোর লেখাপড়ার জন্য বই, খাতা, কলম কিনে দিতাম। নিজে ছেঁড়া কাপড় পরতাম কিন্তু তোকে কোনোদিন ছেঁড়া কাপড় পরতে দিইনি। নিজের জন্য কখনো ভালো কাপড় কিনতাম না কিন্তু তোর বন্ধুদের কাছে যেন কাপড় বা জুতা নিয়ে কথা শুনতে না হয় সেজন্য তোকে সবসময় দামি কাপড় জুতা কিনে দিতাম। আজ তুই লেখাপড়া শিখে অনেক ভালো চাকরি করছিস। প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা বেতন পাচ্ছিস। সেই টাকা দিয়ে নিজের জন্য দামি শার্ট, জুতা, বউয়ের জন্য দামি শাড়ি, দামি জুতা, আরও অনেক কিছু কিনে আনিস। কিন্তু কখনো আমার জন্য একখানা দামি কাপড় কিনে আনিসনি। তবুও আমি খুশি থাকতাম তুই সুখে আছিস দেখে। বউকে নিয়ে তুই সুন্দর সাজানো গোছানো আর চারদিকে রঙিন বাতির আলোয় ভরা ঘরে থাকিস। সেই ঘরে সারাদিন সুগন্ধি ভেসে বেড়ায় আর আমাকে একটি অগোছালো ঘরে থাকতে দিয়েছিলি। সে ঘরের একপাশে ছিল বাড়ির পুরাতন আর ভাঙা আসবাবপত্র। তাতে ছিল ইঁদুরের বসবাস আর বিদ্ঘুটে গন্ধ। তবু কোনোদিন কিছু মনে করিনি। কারণ তুই তো সুখে ছিলি। তোর সুখেই আমি নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছিলাম। তোর ছেলের জন্মের পর তার কাপড়-চোপড় ধোয়া, সারাক্ষণ কোলে করে নিয়ে বেড়ানো সবকিছুই করেছি। ঘোড়া সেজে ওকে পিঠে করে ঘুরিয়েছি। তখন আমার শরীরে অনেক শক্তি ছিল। ধীরে ধীরে আমার শরীরের শক্তি কমে আসতে লাগল, তাই বাড়ির কোনো কাজ করতে পারতাম না বরং আমার সেবা করার জন্য কাউকে প্রয়োজন ছিল। সেজন্য তোর বউ আর আমাকে দেখতে পারত না। প্রতিদিন আমার নামে তোর কাছে নালিশ দিত। তাই তুই আমাকে এখানে রেখে গিয়েছিস। তবুও আমার দুঃখ নেই, তুই সুখে থাকলেই আমার সুখ।
আজ তোকে কিছু কথা বলব, যা কোনোদিনই বলা হয়নি। তখন তোর বয়স ৩ কি ৪ বছর। একদিন হঠাৎ করে তোর গায়ে জ্বর শুরু হলো। আমি জলপট্টি দিতে থাকলাম তবুও জ্বর কমছে না। তোর বাবা বেঁচে নেই, একাকী আমি কি করব ভেবে কূল পাইনি। সেদিন প্রায় অর্ধেক রাতের সময় তুই জ্বরের চোটে কি সব বলতে শুরু করেছিলি আর জ্বর বেড়েই চলছিল। সে সময় কোনো কূল না পেয়ে আমি তোকে কোলে নিয়ে রাতের অন্ধকারে ৫ মাইল দূরে গফুরগাঁওয়ের মোহন কবিরাজের বাড়িতে ছুটতে থাকি। সেদিন পুরো অন্ধকার ছিল না, অল্প অল্প জোৎস্না ছিল। আমি তোকে কোলে নিয়ে প্রাণপণ ছুটতে লাগলাম। পথে বেশ কয়েকবার গাছের শেকড়ের সঙ্গে হোঁচট খেয়ে আমার পায়ের আঙুল ফেটে রক্ত ঝরেছিল। তবু তোর জন্য আমি সেই কষ্টকে উপেক্ষা করে ছুটে চলেছি মোহন কবিরাজের বাড়ির দিকে।
একথা তোকে কখনো বলতে চাইনি। কিন্তু আজ মনে বড় দুঃখ নিয়ে বলেই ফেললাম। যে তোকে না দেখে আমি একটা দিনও থাকতে পারতাম না, কোথায় আছিস কেমন আছিস ভেবে অস্থির হয়ে যেতাম। সেই তুই আমাকে আজ থেকে চার বছর আগে এখানে রেখে গিয়েছিলি কিন্তু তারপর থেকে একটিবারও দেখতে আসিসনি। বিছানায় যখন ঘুমাতে যাই তোর কথা মনে পড়ে। দিনের বেলা যখন খেতে বসি তখন তোর কথা মনে পড়ে, ঠিকমতো খেয়েছিস কিনা, এখনো মাছ খেতে তোর সমস্যা হয় কিনা। এসব কথা মনে পড়ে আর আমার দুচোখ দিয়ে অশ্রম্ন গড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আমার কথা একটিবারও তোর মনে পড়ে না। একটিবারের জন্য তুই আমাকে দেখতে আসিসনি। তাই মনে খুব কষ্ট লাগে।
অনেক কথা বললাম, হয়তো বিরক্ত হচ্ছিস। তাই আর বেশি কিছু বলব না। আলস্নাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তোমাকে সবসময় সুখে রাখে। আর আমার দাদুভাইকে যেন তোর থেকেও অনেক শিক্ষিত আর জ্ঞানী বানিয়ে দেয়। আমি আরও দোয়া করি যেন আমার মতো তোদের হতে না হয়।
পরিশেষে তোর সুখ কামনা করে শেষ করছি। ভালো থাকিস।
ইতি
তোর গর্ভধারিণী মা।
চিঠিটা পড়ার পর সুলতান সাহেবের দুচোখের কোণে অশ্রম্ন গড়িয়ে পড়তে শুরু করল। কুলসুম বেগমও কিছু বুঝতে না পেরে রান্নাঘরে চলে গেলেন। সুলতান সাহেব তার ড্রাইভারকে ডেকে গাড়ি বের করতে বললেন। একমাত্র ছেলে রুদ্রকে নিয়ে সুলতান সাহেব গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানায় যেতে নির্দেশ দিলেন। রুদ্রর বয়স তখন ১৪ বছর। সে বুঝতে পারল না যে বাবা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। তাই সে জিজ্ঞেস করল- বাবা, আমরা কোথায় যাচ্ছি? আর আগে থেকে কিছু না বলে হঠাৎ করেই বা কেন? সুলতান সাহেব কিছুই বললেন না। উত্তর না পেয়ে রুদ্র চুপটি করে বসে থাকল। ঘণ্টাদুয়েক পর তারা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে পৌঁছালো। তখন বৃদ্ধাশ্রমের সামনে কিছু লোক বসে আছে। সবার গায়ে সাদা পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি। সুলতান সাহেব গিয়ে তাদের তার মায়ের কথা বললেন এবং মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে কেউ আর কোনো কথা বললেন না। তখন সুলতান সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন- কি ব্যাপার, সবাই চুপ করে আছেন কেন? কেউ তো বলুন আমার মা কোন ঘরে। কেউ ডেকে দিন। তখন তার সামনে থাকা ব্যক্তি সেখান থেকে কিছু দূরে একটি কবরের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। বললেন- ওই যে ওই ঘরটাতে আপনার মা শুয়ে আছেন। আমরা একটু আগে তাকে সেখানে রেখে এসেছি। সুলতান সাহেব ছুটে গেলেন কবরের কাছে। পিছনে পিছনে রুদ্রও গেল। কবরের পাশে গিয়ে সুলতান সাহেব নির্বাক হয়ে বসে পড়লেন। আর তার দুই চোখ দিয়ে শুধু কান্নার অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল।
৫২
গল্প
যৌতুকের কালো থাবা "
মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান
আমরা ভুলে গেছি, আলিপুরের সেই চম্পা কলির কথা,
গরীব চাষির অতি আদুরে মেয়ে। শ্যামলা বরণ গায়ের
রং ,টানাটানা দু'টো পটোল চেরা চোখ,উন্নত নাসিকা, কচি লাউয়ের ডগার মতো হাত-পায়ের তারুণ্য,চঞ্চলা হরিণী ,ওর উচ্ছল হাসি কৃষক পাড়া মাতিয়ে রাখতো সর্বক্ষণ। পাড়ার লোকে ওকে আদর করে কলি বলে ডাকতো। বিয়ে হয়েছিল পাশের গাঁয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। বড় আশা নিয়ে সে শশুরবাড়ি যায়।
মন, প্রাণ, শ্রম, ভালোবাসা সব উজাড় করে, সে চেয়েছিলো এতটুকু আশ্রয় ও একবিন্দু ভালোবাসা।
কিন্তু সে তা পায়নি।
উঠতে বসতে সর্বক্ষণ গালমন্দ ও ভিখারির মেয়ে
কথাগুলো এতদিনে তার নিত্যকার সাথী হয়ে যায়।
এর সাথে নতুন যোগ হয়, যৌতুকের টাকা।
শত অত্যাচার এতদিনে সে মুখ বুজে সয়েগেছে,
মা-বাবা কষ্ট পাবে ভেবে, বাবার বাড়ির কাউকে কিছু জানতে দেয়নি।
এবার তো শুধু সয়ে যাবার নয়,
দরকার নগদ টাকা!
চম্পাকলি বাবার বাড়ি আসে ভারাক্রান্ত ভগ্নহৃদয় ও একবুক হতাশা নিয়ে। বাড়িতে ঢুকতেই
ছোটছোট একহালি ভাই-বোন দৌড়ে এসে
ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, বুবু এসেছে !
চার ভাই-বোনের ভেতর চম্পাকলি সবার বড়।
ছোট ভাইটি বলল, জানো বুবু আমরা আজ
সকাল থেকে নাখেয়ে আছি, ঘরে কিছুই নাই,
তুমিও কি নাখেয়ে আছো ?
অবুঝ ভাইয়ের প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পেলনা
চম্পা কলি, শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে ধুলো বালি ঝেড়ে ভাইকে কোলে তুলে বুকের সাথে চেপে ধরে ।
ঘরে গিয়ে দেখে কঙ্কালসার মা ঘরের মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে।
---- মা তোমার কি হয়েছে ?
----- কে, কোলি ? তুই কখন এলি ? জামাই বাবাজী
কই ? তুই খবর না দিয়ে হঠাৎ এলি, তোর শরীর ঠিক আছে তো ?
--- মা, তুমি আগে বলো, তোমার কি হয়েছে ?
--- না, আমার তো কিছু হয়নি এমনিতে শুয়ে আছি ।
এসময় পাশ থেকে তের বছরের লিলি বলে উঠলো,
জানো বুবু মা'র আজ তিনদিন ধরে জ্বর, বাবাকে
ঔষধ আনতে বললে বলে, "টাকা নেই" ।
আমার কথা রাখ, তুই বল, শশুর বাড়ি কেমন আছিস ?
কলি মা'র মাথার কাছে বসে মা
আমার কথা রাখ, তুই বল, শশুর বাড়ি কেমন আছিস ?
কলি মা'র মাথার কাছে বসে মা'র মাথায় হাত
বুলাতে বুলাতে বলল,
--- মা আমি ওখানে বেশ ভালো আছি, তোমাদের
জামাই শহরে গেছে তাই আসতে পারেনি ।
--- তুই কখন কি খেয়েচিস ? একথা বলেই কলির মা হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে এবং বলে, মা গো ঘরে এমন কিছু নাই যা তোর সামনে দেবো।
--- মা, তুমি কেঁদো না, আমি সব শুনেছি ।
শোনো মা, আমার নানু আমাকে যে এক জোড়া রূপার
নূপুর দিয়েছিলেন, আমি ওটা বশির কাকার দোকানে
বন্ধক রেখে কিছু চাল নিয়ে আসছি, বলেই কোলি
দ্রুত উঠতে গেলো, কাতর কন্ঠে কোলির মা বলল,
আমার মায়ের হাতের শেষ চিন্হটুকু তুই খোয়ায়ে ফেলবি ?
কলি মায়ের কথায় কোনো প্রকার কর্ণপাত না করে
নূপুর জোড়া নিয়ে দোকানে ছুটে গেল।
দোকান থেকে চাল এনে, ভাই-বোনদের খাবার ব্যবস্থা
করে চম্পা কলি এবার এক বুক ব্যাথা নিয়ে ভয়েভয়ে ছুটে চলল শশুর বাড়ির দিকে।
এদিকে চম্পার স্বামী এবং শশুর বসে আছে বউ টাকা নিয়ে আসবে তারপর জমির বায়না করতে যাবে।
বউকে দেখেই শশুর বলল, দাও বউমা তাড়াতাড়ি টাকা
দাও, আজকের ভিতর একলক্ষ টাকা না দিতে পারলে একবিঘা জমি হাতছাড়া হয়ে যাবে ।
চম্পাকলি বারান্দার খুটি ধরে এক পা উঠানে আর এক পা বারান্দায় রেখে ঠায় দাড়িয়ে আছে, কিছুই বলে না।
শশুর একই কথা দুই তিনবার বলার পরেও চম্পা কলির কোন উত্তর না পেয়ে শশুর তার ছেলেকে বলল, ভালো করে জিগা তোর বউকে কেন ওবাড়িতে পাঠানো হয়েছিলো ?
ছেলে চড়া গলায় বলল, কথা বলছিস না যে ? টাকা দে।
চম্পা কলি এবার ক্ষীণ ও ভীতু স্বরে বলল, টাকা আনতে পারিনি । এ কথা, শোনার সাথে সাথে চুলের
মুঠি ধরে কিল-ঘুষি, লাথি-চড় মেরে আধমরা চম্পা কে বারান্দার কোনে ফেলে রেখে তার স্বামী চলে যায়।
কিছু সময় পর জ্ঞান ফিরে এলে, চম্পার চোখের সামনে
একে একে ভেসে উঠে, ছোট ছোট ভাইবোনের ক্ষুধার্ত চারখানা শুকনো মুখ, অসুস্থ মায়ের কঙ্কালসার দেহ, স্বামীর অকথ্য গালিগালাজ ও মারপিটের দৃশ্য। কিছু পরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে ঘরের ভিতর গিয়ে চম্পা ঘরে রাখা কীটনাশক ভর্তি বোতল ঢকঢক করে গিলে ফেলে।
এবার তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে , চোখের সামনে আবছা আবছা ভেসে উঠে, ছোট ছোট ভাই-বোনের ক্ষুধার্ত চারখানা শুকনো মুখ,অসুস্থ মায়ের কঙ্কালসার দেহ, স্বামীর অকথ্য গালিগালাজ ও মারপিটের দৃশ্য ।
কিছু পর চোখের সামনের সবকিছু অন্ধকারে মিলে যেতে থাকে, শত চেষ্টা স্বত্তেও সে আর কিছু দেখতে
পায় না। আস্তে আস্তে চম্পাকলির কাজল কালো চক্ষু যুগল চিরকালের জন্য বুজে যায় ।
৫৩
প্রতিটি দিন হোক মা দিবস
মীর এনামুল হক
মা শব্দটি বড়ই আশ্চর্যের! খোদার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার হলো মা।
আমাকে জন্ম দিতে নিয়ে মা মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করেছেন, শুধু আমাকে পৃথিবীর আলো দেখাবেন বলে। যে মানুষটি সকল কষ্ট বিসর্জন দিয়ে আমাকে এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন আমার শ্রেষ্ঠ জান্নাত, মমতাময়ী মা।
আজ বিশ্ব মা দিবস। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্ব মা দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। প্রাচীন গ্রিসে বিশ্ব মা দিবস পালন করা হলেও আধুনিক কালে এর প্রবর্তন করেন এক মার্কিন নারী। বর্তমানে
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, জাপান, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হয় মমতাময়ী মহীয়সী মায়েদের প্রতি।
'মা' হচ্ছেন একজন নারী, যিনি সন্তানকে গর্ভধারণ ও জন্মদান করেন এবং সন্তানকে বড় করে তোলেন। তিনিই সন্তানের প্রথম অভিভাবক ও আপনজন। সন্তানের পরম আশ্রয়স্থল 'মা'।
পৃথিবীর সব ধর্মেই মায়ের মর্যাদাকে উচ্চাসীন। পৃথিবীতে 'মা' শব্দটি সবার ঊর্ধ্বে।
মা-এর মতো শান্তির ডাক আর কোথাও নাই।
মা ঘরের মধ্যমণি। তার বৃত্তেই প্রদক্ষিণ করে সকল সন্তান।
মায়ের মমতায় শুরু হয় জীবনের পথচলা। তারই হাত ধরে মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠা হয়। তার মুখে ঘুমপাড়ানি গান, রূপকথার গল্প, জীবনে বড় হওয়ার গল্প, বেঁচে থাকার গল্প, মানুষ হওয়ার গল্প, হাসি-তামাশাসহ সব কিছুই শুনতে পাই।
সব আবদার আহ্লাদ পূরণ করা যেন মায়ের একমাত্র দায়িত্ব। জীবনে চলার পথে দুঃখ এবং ক্লান্তিতে মা-ই শান্তনার শেষ আশ্রয়স্থল। মায়ের স্পর্শেই সন্তান ধীরে ধীরে পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠে। যার মা নেই পৃথিবীতে তার কিছুই নেই। মা ছাড়া সব সন্তানই
অবহেলিত একা। আর পৃথিবীতে সবচেয়ে শান্তির যে জায়গা তা হলো মায়ের আঁচল। মায়ের মতো এই জগতটাও এতো সুন্দর নয়। পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে তার মধ্যে যে সম্পর্ক সকল স্বার্থের ঊর্ধ্বে তা হলো মা-সন্তানের সম্পর্ক। পৃথিবীর আলো দেখানো থেকে শুরু করে সারাটি জীবন মা তার সন্তানকে আগলে রাখেন পরম মমতায়।
মা মানে অন্ধকারের মাঝে একমাত্র দীপ্তিমান আভা, পথের দিশারী। মা মানে হাজার দুখের মাঝে এক টুকরো আনন্দের ছোঁয়া। মা হলেন সবচেয়ে মূল্যবান এবং দামী।
সব মায়ের ভালোবাসা এক ও অভিন্ন। মা কখনো ধনী কিংবা দরিদ্র হন না। মা সবসময় মা-ই। মা শিক্ষিত হোক অথবা না হোক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তিনি। মা হলেন শ্রেষ্ঠ ডাক্তার আবার শ্রেষ্ঠ মনোবিজ্ঞানীও। সন্তানের কোনো কিছু হলে মায়ের অন্তর সবার আগে জানে। তাই মায়ের সাথে সবকিছু শেয়ার করা মানুষগুলো কখনো পথভ্রষ্ট হয় না। কারণ মা কখনো সন্তানের অমঙ্গল চান না। ছেলে আমার সাত রাজার ধন, একথা একমাত্র মায়ের মুখেই শোভা পায়। মা হাজার গালি দিলেও তা সন্তানের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। কারণ মায়ের গালিতেও সন্তানের জন্য দোয়া আর আশীর্বাদ থাকে। পৃথিবীর সব মানুষ বিপক্ষে গেলেও একমাত্র মা সন্তানের পক্ষে থাকেন। অতএব, মায়ের গালি শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা। মায়ের ঋণ কখনো শোধ করবার মতো নয়।
মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের স্বর্গ, তাই মায়ের সাথে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলা উচিত না। মা অমূল্য রতন। বৃদ্ধ বয়সে মায়ের সেবা করা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যার ঘরে মা জীবিত আছে তার কাছে জান্নাত আছে। সুতরাং, পৃথিবীর সবকিছুর ঊর্ধ্বে মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
বৃদ্ধাশ্রমে নয়, পরম স্নেহে আর ভালোবাসায় ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা।
তাই মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে চাইলে তার জন্য কোনো আয়োজন বা অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হয় না। আমার কাছে বছরের প্রতিটি দিনই মা দিবস।
৫৪
গল্প
রিলিফ
আফছানা খানম অথৈ
ফয়েজেন্নেসা আশি বছর বয়সে পা ফেলেছে।শরীর স্বাস্থ্য তেমন ভালো নেই। ঠিকমতো হাটাচলা করতে পারছে না।চোখে ঠাহর পায় না,ঝাপসা ঝাপসা দেখে।ভালো মতো দেখতে পায় না।দুছেলে থাকা সত্বেও আজ সে বড় একা,তার পাশে এখন কেউ নেই।ছেলে দুটো তাকে ফেলে চলে গেছে।থাকা খাওয়ার জায়গা নেই।পাশের বাড়ির ছমির মিয়া থাকে দয়া করে বারান্দার এক কোনে থাকতে দিয়েছে।সেই ঘরের অবস্থাও তেমন ভালো না।কোনমতে দিন গুরজান করছে ফয়েজেন্নেসা।দুদিন ধরে পেটে দানাপানি পড়েনি।ছমির মিয়ার অবস্থাও তেমন ভালো না।রিক্সা চালিয়ে কোনমতে সংসার চালায়।তবুও যখন যা পারে ফয়েজেন্নেসাকে খেতে দেয়।কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে সে অসুস্থ রিক্সা চালাইতে পারে না।খিদার জ্বালায় তার সন্তানেরা কান্নাকাটি করছে।ফয়েজেন্নেসাকে কি দেবে?
ফয়েজেন্নেসা ও বসে থাকে না।লাঠি ভর দিয়ে লোকের দুয়ারে একটা দুটা টাকার জন্য হাত পাতে।আমাদের সমাজে আজ একটা বিষয় চোখে পড়ে।প্রায় মানুষ দেখা যায়, বিলাসিতা করার সময় হাত বাড়িয়ে খরচ করে,আর দান করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কৃপণতা করে। অথচ এই দানের টাকাই পরকালে জান্নাতে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে,আর বিলাসিতা জাহান্নামে যেতে সাহায্য করবে।অথচ আমরা আসল জাগায় এসে কৃপণতা করি।ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়ার সময় অনেকে পকেটে /ম্যানিব্যাগে হাত দিয়ে দেখে খুচরা টাকা আছে কি না?যদি থাকে ভিক্ষা দেয়।আর যদি না থাকে বলে,
খুচরা টাকা নেই,মাফ করে যান।অনুরুপভাবে ফয়েজেন্নেসাকেও লোকে দুএক টাকার বেশি দেয় না।আজ ও অনুরুপভাবে তিনি বের হলেন।পরিচিত লোকজন সবাই দুএক টাকা করে দিলো। খালেক তাকে দুটাকার একটা নোট হাতে দিয়ে বলল,
চাচি আজ ইউনিয়ন পরিষদে রিলিফ দেবে।আপনি গিয়ে দেখেন কিছু পান কি না?
ফয়েজেন্নেসা লাঠিভর দিয়ে এক পা দুপা করে এগিয়ে চলল।কিছুপথ হাটে আবার ঝিরায়,কিছুপথ হাটে আবার ঝিরায়।এভাবে অনেক কষ্টে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হলেন।
সে কী!পরিষদের সামনে লম্বা লাইন।ক্লান্ত ক্ষুধার্ত মানুষগুলো তীর্থেরকাকের মতো দাঁড়িয়ে আছে।সূর্য তির্যকভাবে পশ্চিক আকাশে ঢলে পড়েছে।সূর্যমামা তার আলোর ডালি বিছিয়ে দিয়েছে।লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলো ঘামে ভিজে জবজবে।অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করছে কখন রিলিফ দেবে।সেই সঙ্গে ফয়েজেন্নেসাও দাঁড়িয়ে আছে।পরক্ষণে প্রকাশ হলো চেয়ারম্যান আসতে আর ও দেরী হবে।উনি কাজে আটকা পড়েছেন।
কী আর করা অপেক্ষার পর অপেক্ষা...।
এক সময় চেয়ারম্যান আসলেন।আসন পেতে বসলেন।তালিকা নিয়ে বসলেন পরিষদে দায়িত্বে থাকা অন্য আরেকজন লোক।নাম ধরে ডাকছেন। সিরিয়াল অনুযায়ী লোকজন আসছে।কিছু লোকজনকে দেয়ার পর বলে,তালিকায় থাকা নাম শেষ,আর রিলিফ দেয়াও যাবে না।সে কী! এখনো লম্বা লাইন পড়ে আছে...।
লোকজন রিলিফ রিলিফ করে চিৎকার করছে।লোকজনকে সামলাতে না পেরে, চৌকিদার মাইকিং করলো,
আপনারা সবাই বাড়ি চলে যান।আজকের মতো রিলিফ দেয়া শেষ।
কী আর করা লোকজন বাড়িমুখো হলো।ফয়েজেন্নেসার ক্লান্ত ক্ষুধার্ত দেহটি যেন চলছে না।তিনি ঘাপটি মেরে বসে আছেন।পরক্ষণে দেখলেন মাইকিং করা লোকটি তার দিকে এগিয়ে আসছে।কাছাকাছি আসতেই বললেন,
বাবা আমায় কিছু রিলিফ দাও।আজ দুইদিন ধইরা না খাইয়া আছি।আর চলবার পারছি না।
আপনার নাম কী?
ফয়েজেন্নেসা।
স্বামীর নাম...।
হাশমত আলী।
দেখি আপনার নাম আছে কী না?
চৌকিদার তড়িঘড়ি করে ভিতরে গেল।তারপর এসে বলল,
আপনার নাম তালিকায় নেই। রিরিফ দেয়া যাবে না।তাছাড়া আজকের মতো রিলিফ দেয়া শেষ।
দ্যাখো না বাবা কিছু দেয়া যাইব কিনা?দুদিন ধইরা না খাইয়া আছি।
এভাবে তিনি কয়েকবার অনুরোধ করলেন।কিন্তু কোন লাভ হলো না।চৌকিদার এবার কড়া ধমক দিয়ে বললেন,
বললাম না, দেয়া যাবে না।তবুও প্যাঁচাল পারতাছেন ক্যান?যান বলছি,তানা হলে গলাধাক্কা...।
হায়রে দুনিয়া,চৌকিদার ও ক্ষমতা পেলে রাজার ভাব দেখায়।
ফয়েজেন্নেসার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হলো না।চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল তার মুখ পানে।অতপর দেখল,শার্টফ্যান্ট পরা তিন চারজন ভদ্রলোক পরিষদের দিকে এগিয়ে আসছে।তখনি চৌকিদার সালাম দিয়ে বলল,
স্যার আসতে এত দেরী হলো কেনো?
আপনাদের চালের বস্তা রেডি করে রেখেছি।
বলতে না বলতে লোকগুলো ভিতরে গেল।চেয়ারম্যান খুব খাতির করে তাদেরকে চা নাস্তা করালেন।তারপর সবাইকে দুবস্তা করে চাল দিলেন।তারা দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে চালের বস্তা নিয়ে ফয়েজেন্নেসার সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।তিনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন।
আসলে এরা কেউ গরীব না। দুজন গভঃমেন্ট প্রাইমারী স্কুল টিচার, দুজন সমাজপতি।কিন্তু রিলিফ খাচ্ছে কেনো?
এরা চেয়ারম্যানের খয়ের খাঁ লোক,নির্বাচনের সময় সাপোর্ট করেছে,তার দল করেছে।তাই আজ চেয়ারম্যান গরীবের রিলিফ দিয়ে তাদেরকে আপ্যায়ন করছে। আজ একটা বিষয় লক্ষ্য করছি,প্রকৃত গরীব লোক রিলিফ পায় না।রিলিফ পায় মাস্টার,সমাজপতি,মাতব্বর এরা।আমি এক ফয়েজেন্নেসার কাহিনী লিখেছি।এরকম অনেক ফয়েজেন্নেসা অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।কেউ তাদের খবর রাখে না।।তারা কোন "রিলিফ" পায় না।
৫৫
প্রবন্ধ
বিভাগ - প্রবন্ধ
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য
চেষ্টাটাই বড় কথা। "
লেখক, রতন বসাক
এই পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীর কোন লক্ষ্য থাকে না জীবনে। তারা সবাই প্রাকৃতিক নিয়মেই জন্মগ্রহণ করে এই পৃথিবীতে আর ধীরে ধীরে বড় হয়। তারপরে একদিন মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। তারা সবাই লক্ষ্যহীন ভাবে জীবন যাপন করে। প্রাণীদের মধ্যে মানুষই সবচেয়ে উন্নত। তাই মানুষের জীবনে একটা লক্ষ্য থাকে। জীবনটাকে লক্ষ্যহীন ভাবে অতিবাহিত করে না কেউ।
আমরা অর্থাৎ মানুষেরা যতদিন ছোট থাকি ও অবুঝ থাকি, ততদিন আমাদের মনে কোন লক্ষ্য থাকে না। ছোটবেলাটা হেসে খেলে আর খুনসুটি করে কাটিয়ে দিই। তখন আমাদের মনে কারোরই কোনো নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য থাকে না। এরপর পরিবেশের সাথে চলতে চলতে আমরা সবাই একটু একটু করে বুঝতে শিখি জীবনের মানেটা কী?
যখনই আমরা জীবন সম্বন্ধে বুঝতে শিখি, তখনই আমরা প্রত্যেকেই মনে মনে একটা লক্ষ্য স্থির করে নি, যে আমরা ভবিষ্যতে কে, কী হবো? আর সেই সাথে আমরা প্রত্যেকেই পড়াশোনা ও অন্যান্য কিছু শেখার চেষ্টায় নিজেকে উদ্বুদ্ধ করি। আবার সবার দ্বারা সব কিছু হওয়াও সম্ভব নয়। তাই সবার আগে নিজেকে ভালো করে বুঝতে হবে আমি কোন জিনিসটায় বেশি পারদর্শী।
ঘরের অভিভাবকদের ইচ্ছায় কোন সময়ই নিজের লক্ষ্যটাকে স্থির করা উচিত নয়। কেননা বাবা মায়ের ইচ্ছা যে আমি যেন বড় হয়ে ডাক্তার হই, কিন্তু আমার ডাক্তারিতে একদমই মন নেই বরঞ্চ আমার গান গাইতে ভালো লাগে। বাবা মায়ের কথা শুনে আমি যদি সেই হিসাবে এগোতে থাকি। তাহলে আমি না ডাক্তার হবো, না ভালো গায়ক হতে পারব জীবনে। তাই প্রত্যেকেরই নিজের যোগ্যতা ও ক্ষমতা অনুযায়ী লক্ষ্য স্থির করা উচিত।
আমাদের সবার জীবনটাই অনিশ্চিত। আর লক্ষ্যহীন ভাবে যদি আমরা এগোতে থাকি। তাহলে জীবনে কোনোদিনই উন্নতি ও অগ্রগতি করতে পারব না। একটা ঠিকানা বিহীন চিঠির মতো আমাদের জীবনটাও এদিক ওদিক ঘুরতে থাকবে। জীবনে যদি লক্ষ্য নিয়ে এগোতে থাকি, তাহলে পুরোটা না হলেও কিছুটা অন্তত পৌঁছানো যায় নিজের লক্ষ্যে। আর চেষ্টার চেয়ে বড় কিছু হতেই পারে না জীবনে।
লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করলে সাফল্যও আসতে পারে আবার অসাফল্যও আসতে পারে। আর যদি কোন চেষ্টাই না করি, তাহলে তো কিছুই আসবে না জীবনে। চেষ্টার পর যদি সাফল্য আসে সেটা তো খুবই ভালো জীবনের জন্য। আর যদি অসফল হই চেষ্টার পরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে, তাহলেও ভেঙ্গে পড়া উচিত নয়। সেই অসফলতার কারণ খুঁজে যদি আবার সঠিকভাবে এগোই। তবে নিশ্চয়ই সাফল্য আসে জীবনে আর লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় সহজে।
এক এক জনের এক এক রকম লক্ষ্য থাকে জীবনে। যার যেরকমই লক্ষ্য থাকুক না কেন। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম একাগ্রতার সঙ্গে করে যেতে হবে। পথে যত বাধাই আসুক না কেন নিশ্চল থাকতে হবে। আর উদ্যমের সাথে স্থির মন নিয়ে চলতে থাকলে, লক্ষ্যে নিশ্চয়ই পৌঁছানো যায়। জীবনে কোন লক্ষ্য না থাকলে, বাঁচার আনন্দ পাওয়া যায় না। তাই প্রত্যেককেই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখে জীবনে চলার প্রয়োজন আছে। শুধু লক্ষ্য রাখলেই হবে না, তার জন্য মন ও প্রাণ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য।
৫৬
ছোট উপন্যাস
অন্য রকম প্রেম
সালাহ্ উদ্দিন আমির
আজ পহেলা বৈশাখ,রহিম বৈশাখী মেলায় যাবে৷তাই সে সকাল সকাল নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ল ৷রাস্থায় এসে অপেক্ষা করতে লাগল রিক্সার জন্য৷কিন্তু রিক্সা পাচ্ছিলনা তাই সে নিজের উপর খানিকটা বিরক্ত হয়ে শেষে হাটা ধরল, কিছু পথ হাটার পর হঠাৎ একটা রিসকা চলে এলো,রহিম বলল এই রিসকা যাবে ? রিক্সাওয়ালা বলল কোথায় বাবু৷রহিম বলল বৈশাখী মেলায় ৷ রিক্সাওয়ালা বলল যাব বাবু উঠুন,রহিম রিক্সা ওয়ালার কথা শুনে রিসকায় উঠে বসল৷ রিক্সা ওয়ালা রিক্সা চালাতে লাগলো৷ এমন সময় পিছন থেকে একটি মেয়ে বলে উঠল এই রিসকা দাঁড়াও আমিও যাব,আমাকে নিয়ে যাও !রহিম মেয়েটির কথা শুনে পিছন ফিরে তাকালো,তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে কালো বোরকা পড়া মুখোশ পড়নে দেয়ে হেটে আচ্ছে ৷রহিম রিক্সা ওয়ালাকে বলল এই রিসকা থাম রহিমের কথা শুনে রিক্সাওয়ালা রিসকা থামালো৷মেয়েটি রিসকার সামনে এসে দাঁড়ালো৷সে রহিকে রিসকায় দেখে বললো আমাকে একটু সাহয্য করবেন ভাই আমি বড় বিপদে পড়েছি?রহিম মেয়েটির কথা শুনে বলল কিসের বিপদ আপনি যাবেন কোথায়?সে বলল আমি বৈশাখী মেলায় যাব ৷প্রায় এক ঘন্টা যাবত রিসকার জন্য দাঁড়িয়ে আছি ৷কিন্তু একটা রিসকাও পাচ্ছিনা৷তাই আপনা কে একটু বিরক্ত করতে আসলাম ৷এদিকে আমার বন্ধুরা আমার আসতে দেরি দেখে তারা সবায় আমাকে রেখে মেলায় চলে গেছে,কোন অসুবিদা নেই ভাড়া আমি দিব ৷ মেয়েটির কথা শুনে রহিম বলল না না ভাড়া আপনাকে দিতে হবেনা ,ভাড়া নিয়ে কোন সমস্যা নেই৷আমিতো মেলায়ই যাচ্ছি ৷ সমস্যা হল আপনি একজন
অপরিচিত মেয়ে মানুষ৷চিনা নেই
জানা নেই কি করে আপনাকে
আমার রিসকায় তুলি বলুনতো ৷
মেয়েটি বলল ও তাই?কে বলেছে আমি আপনার অপরিচিত,আমাকে চিনেন না জানেন না৷আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবকে তো চিনেন৷রহিম বলল হ্যাঁ চিনি,উনিত সন্পর্কে আমার মামা হন ৷উনার সাথে আপনার সন্পর্ক কি?মেয়েটি বলল আমি হলাম চেয়ারম্যান সাহেবের এক মাত্র ভাগ্নি
এখনতো আর মানা করবেন না?রহিম বলল ঠিক আছে ,ঠিক আছে আগে বলবেন তো৷ আর পরিচয় দিতে হবেনা৷আপনি রিসকায় উঠুন৷মেয়েটি দু'হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল তাহলে আমার হাতটি ধরুন৷রহিম বলল
ঠিক আছে এই বলে মেয়েটির হাতধরে রিক্সায় উঠাল৷তারপর রিক্সা ওয়ালাকে বলল এই রিসকা চল ৷রিক্সাওয়ালা রিসকা বেয়ে যাচ্ছে মেলার দিকে৷ এদিকে মেয়েটি রিসকায় উঠে চুপ চাপ বসে রইল কোন কথা বলছেনা ,রহিমও চুপ চাপ বসে রইল৷ কেউ কাউকে কিছু বলছেনা ৷এমন সময় এক ফুল ওয়ালা ফুলের মালা ফেরি করতে করতে যাচ্ছে মালা লাগবে মালা,হরেক রকম ফুলের মালা !বেলি জবা বকুল গোলাপ ফুলের মালা আছে ৷ ফুল ওয়ালাকে দেখে মেয়েটি বলল ভাই আমাকে একটা বেলি ফুলের মালা কিনে দিবেন খোপায় পড়বো?আমার কাছে টাকা নাই, ভুলে আমার ব্যাগটা বাসায় ফেলে এসেছি৷ টাকাটা মেলায় গিয়ে আমার বন্ধুদের কাছথেকে নিয়ে দিব ৷
রহিম বলল ঠিক আছে,এই রিসকা থামাও,ফুল ওয়ালাকে
ডাকো ৷রিক্সাওয়ালা রহিমের কথা শুনে রিসকা থামালো তারপর ফুলওয়ালাকে ডাকলো ৷রিক্সাওয়ালার কথা শুনে ফুল ওয়ালা হরেক রকম ফুলের মালা নিয়ে হাজির হল৷ কোন ফুলের মালা নিবেন আপা ?মেয়েটি বলল কি কি ফুলের মালা আছে তোমার কাছে৷ফুল ওয়ালা বলল হরেক রকম ফুলের মালা আছে৷ বেলি জবা
বকুল গোলাপ ৷ মেয়েটি বলল আমাকে একটি বেলি ফুলের মালা দেন দেখি ৷ফুলওয়ালা
বলল এই নেন আপা একেবারে তাজা ফুলের মাল,খোপায় পড়লে আপনাকে যা লাগবেনা মেয়েটি বলল ঠিক আছে দাম
কত?ফুল ওয়ালা বলল পঞ্চাশ টাকা আপা৷মেয়েটি রহিমকে বলল ভাই ফুলওয়ালাকে পঞ্চাশটি টাকা দিয়ে দেন !রহিম মেয়েটির কথা মত ফুল ওয়ালাকে পঞ্চাশ টাকা দিল৷ ফুলওয়ালা টাকা নিয়ে চলে
গেল ৷তারপর রিক্সাওয়ালা রিসকা চালিয়ে মেলার দিকে ছুটে চলল৷কিছু পথ যাওয়ার
পর দেখে এক চুড়ি ওয়ালা বাহারি রঙের চুড়ি নিয়ে হেটে
যাচ্ছে ৷মেয়েটি চুড়ি ওয়ালাকে
দেখে বলল ভাই আমাকে তিন
চার মুঠো চুড়ি কিনে দিবেন ৷ দেখেনা আমার হাত দুটো একে
বারে খালি পড়ে আছে ?রহিম মেয়েটির কথা শুনে বলল দিবো
না কেন,নেও তোমার যে কয় মুঠো চুড়ি লাগে নিয়ে নাও !মেয়েটি বলল এই রিক্সাওয়ালা
চূড়িওয়ালাকে ডাঁকতো ৷ রিক্সাওয়ালা মেয়েটির কথা শুনে
চুড়ি ওয়ালাকে ডাকলো ৷ চুড়ি ওয়ালা বাহারি রঙের চুড়ি নিয়ে
এসে হাজির৷চুড়িওয়ালা বলল
কয় মুঠো চুড়ি লাগবে আপা ৷
লাল নিল সবুজ কমলা সাদা হরেক রকমের চুড়ি আছে ....?
মেয়েটি বলল এক মুঠো লাল এক মুঠো নিল এক মুঠো সবুজ রঙের চুড়ি দেন দেখি ৷ চুড়ি ওয়ালা তিন রঙের তিন মুঠো
দিয়ে বলল এই নেন আপা
আপনার চুড়ি ৷মেয়েটি বলল
কত টাকা দিতে হবে আপনাকে?
চুড়ি ওয়ালা বলল তিনশত টাকা
আপা৷মেয়েটি রহিকে বলল ভাই
চূড়িওয়ালাকে তিনশত টাকা দিয়ে দেন ৷রহিম চুড়িওয়ালাকে
তিনশত টাকা দিয়ে দিল,চুড়ি
ওয়ালা টাকা নিয়ে চলে গেল ৷
এদিকে রিক্সা ওয়ালা আবার রিসকা চালিয়ে মেলার দিকে ছুটে চলল৷আবার কিছু দুর যাবার পর দেখে এক নুপুর ওয়ালা,নুপুর বিক্রি করছে ৷ মেয়েটি বলল এই রিসকা থাম ,
ওই নুপুর ওয়ালাকে ডাকো ৷
রিক্সাওয়ালা নুপুর ওয়ালাকে ডাকলো৷নুপুরওয়ালা নুপুর নিয়ে
চলে এল ,সে বলল নুপুর নিবেন আপা !মেয়েটি বলল হ্যাঁ এক জোড়া ভালো দেখে নুপুর দেও দেখি ৷ নূপুর ওয়ালা তার ব্যাগ
থেকে খুজে এক জোড়া ভালো দেখে নূপুর বের করে বলল এই নেন আপা আপনার নুপুর৷এটি হল এই বছরের সবচেয়ে ভালো নুপুর এক্কেবারে লেটেস্ট মডেল ৷ পড়লে আপনাকে খুব সুন্দর লাগবে৷ভাইয়া দেখে খুশি হবেন৷
মেয়েটি বলল তাই নাকি?কই দেও দেখি কেমন লেটেস্ট মডেলের নুপুর৷এই বলে সে নুপুর ওয়ালার কাছ থেকে নুপুর জোড়া নিয়ে পায়ে পড়ে বলল ঠিক আছে চলবে ..কত টাকা দাম৷ নুপুর ওয়ালা বলল বেশিনা
আপা চারশত টাকা দিলেই হবে৷
রহিম চারশত টাকার কথা শুনে বলল কিছু কম দিলে হবেনা ?নুপুর ওয়ালা বলল না না ভাই সাহেব এর কম দিলে হবেনা আমার কেনাই তিনশত পঞ্চাশ টাকা ৷ পঞ্চাশটি টাকা যদি না দেন তবে খাব কি ? রহিম নুপুর ওয়ালার কথা শুনে বলল ঠিক আছে এই ধর তোমার টাকা ৷ নুপুর ওয়ালা রহিমের কাছথেকে টাকা নিয়ে চলে গেল ৷এদিকে রিক্সাওয়ালা রিসকা নিয়ে মেলার দিকে ছুটে চলল৷কিন্তু কিছু দুর যাবার পর দেখে এক ঝুমকা ওয়ালা কানের ঝুমকা ফেরি কেরে বেড়াচ্ছে৷ঝুমকা ওয়ালাকে দেখে মেয়েটি রহিমকে বলল ভাই আমাকে এক জোড়া ঝুমকা কিনে দিবেন,
দেখেন না কানদুটো একে বারে
খালি পড়ে আছে ৷রহিম বলল ঠিক আছে ডাকো দেখি ঝুমকা ওয়ালাকে ?মেয়েটি ঝুমকা ওয়ালাকে বলল এই ঝুমকা ওয়লা এই দিকে আসতো ভাই ৷ মেয়েটির ডাক শুনে ঝুমকা ওয়ালা চলে এল৷ঝুমকা নিবেন আপা সুন্দর সুন্দর কানের ঝুমকা আছে৷পড়লে আপনাকে যা সুন্দর গালবে না? একে বারে নায়িকা শ্রীদেবীর মতো লাগবে ৷ তা ছাড়া ভাইয়াও আপনাকে দেখে খুশি হবেন ৷মেয়েটি বলল
ঠিক আছে ঠিক আছে,তোমাকে আর প্রশংসা করতে হবে না৷ এখন ভালো দেখে এক জোড়া কানের ঝুমকা দাও দেখি পড়ে দেখি কেমন দেখায় ৷ঝুমকা ওয়ালা বলল এই নেন ভাবি আপনার ঝুমকা৷মেয়েটি ঝুমকা হাতে নিয়ে বলল কত দিতে হবে
তোমাকে ?ঝুমকা ওয়ালা বলল
সবার কাছ থেকে ছয়শত টাকা নেই ,আপনি পাঁচশত টাকা দেন৷
রহিম বলল কিছু কম নিলে হয়না ৷ঝুমকা ওয়ালা বলল না ভাইসাব এর কমদিলে হবেনা ?আমি আগেই কমিয়ে বলেছি ৷ রহিম বলল ঠিক আছে এই ধর
তোমার টাকা ৷ঝুমকা ওয়ালা
টাকা নিয়ে চলে গেল ৷রিক্সা ওয়ালা রিসকা নিয়ে আবার মেলার দিকে ছুটে চলল৷কিছু
ক্ষন পর রিসকা থামিয়ে রিক্সা
ওয়ালা বলল নামেন সাহেব মেলায় এসে পড়েছি রিক্স ওয়ালার কথা শুনে রহিম মেয়েটিকে বলল নামেন মেডাম
এসে পড়েছি ,কোথায় যাবেন যান৷মেয়েটি কোন কথা না বলে
রিসকা থেকে নেমে মেলার গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল৷ রিক্সা ওয়ালা ভাড়া নিয়ে চলে গেল ৷রহিম রিক্সা ওয়ালার ভাড়া দিয়ে যখন গেটের বিতর যাবে তখন মেয়েটি বলল দাঁড়ান
একটা গোলাপ ফুল কিনতে হবে৷রহিম বলল আবার গোলাপ
ফুল কেন ?মেয়েটি বলল সময় হলে জানতে পারবেন এখন গিয়ে লাল টুকটুক দেখে একটা
গোলাপ ফুল কিনে নিয়ে আসেন
তো ৷ রহিম বলল ঠিক আছে এই বলে সে একটি লাল টুকটুকে গোলাপ ফুল কিনে এনে মেয়েটি হাতে দিল ৷মেয়েটি বলল ঠিক আছে,তবে আর একটি ছোট্র কাজ বাকি আছে ভাই!রহিম বলল আবার কি কাজ?মেয়েটি বলল এখান থেকে একটা ফুলের পাঁপড়ি নিয়ে লাভ কেটে আমার কপালে
একটা টিপ পড়িয়ে দিতে হবে ৷
রহিম বলল আচ্ছা দাঁড়ান দিচ্ছি
এই বলে ফুল ওয়ালার কাছ থেকে একটা কেচি নিয়ে সুন্দর করে লাভ কেটে মেয়েটির কপালে টিপ পড়িয়ে দিল৷তার পর বলল এখন আমি আসি৷এই বলে রহিম যখন হাটা দিল ,তখন মেয়েটি বলে উঠল আরে আরে যাচ্ছেন কোথায় এখনও কাজ শেষ হয়নি দাঁড়ান!আর একটা কাজ বাকি আছে ৷ রহিম বলল আবার কি কাজ বাকি? মেয়েটি বলল আজকের মতো এটাই শেষ কাজ এর পর আর আপনাকে বিরক্ত করবনা৷
শুধু আমাকে একটা আলতার
শিঁশি কিনে দিবেন৷ রহিম মেয়েটির কথা মতো মেলা থেকে
একটা আলতার শিঁশি কিনে দিল৷ তারপর মেয়েটি বলল চলেন সামনে বট গাছটির নিচে
গিয়ে বসি ৷ রহিম বলল ঠিক আছে চলেন৷ এই বলে তারা দুজন হাটতে হাটতে বট গাছের নিচে গিয়ে বসল ৷তার পর মেয়েটি আলতার শিঁশি হাতে নিয়ে,পায়ে দিতে দিতে বলল ভাই দেখেন তো এখন আমাকে কেমন লাগছে ৷ রহিম বলল ভালোই তবে মুখোশ আর বোরকার জন্য তেমন বেশি বুঝা যাচ্ছেনা৷মেয়েটি বলল বোরকা আর মুখোশ কি দোষ করল?রহিম বলল বোরকা আর মুখোশ ইতো সব সুন্দর ডেকে রেখেছে ৷বোরকা আর মুখোশ না থাকলে ঠিক মত আপনাকে চিনতে জানতে পারতাম কে আপনি,দেখতে পারতাম আপনার সাঁজের বাহার৷মেয়েটি বলল ও একথা?আমাকে আবার নতুন করে দেখার চেনার কি হল৷তবেকি এখন আমাকে চিনতে পারছেন না৷পুরা আমাকে তো দেখতে পারছেন শুধু মুখটা দেখার বাকি
তাই?আর একটু অপেক্ষা করেন
পায়ে আলতা পড়া শেষ হওক তার পর আমাকে মন ভরে যত খুশি তত দেখতে পারবেন চিনতে পারবেন৷এতো অস্থির হলে চলবে কি ?আমিতো আর
এখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছিনা
আমিতো আপনার সাথেই আছি না কি?কিছু ক্ষনের মধ্যে মেয়েটির পায়ে আলতা পড়া
শেষ হল৷সে রহিমকে বলল পায়ে আলতা দেওয়া শেষ এবার চলেন পান্তা ইলিশ খাব?রহিম
বলল ঠিক আছে চলেন ..?তখন মেয়েটি বলল একটু দাঁড়ান
এই
বলে সে তার বোরকা ও মুখোশ
খুলে ফেলল ৷এবং রহিমকে বলল এবার দেখতো সোনা আমাকে কেমন লাগছে আমাকে
চিন্তে পারছ কি না ,আমি কে বলতো?রহিম মেয়েটির কথা শুনে তার মুখের দিকে তাকাল৷ তাকিয়ে দেখে তার র্গালফ্রেন্ট কবিতা৷রহিম বলল কবিতা তুমি, তুমি শেষ পর্যন্ত আমার সাথে
এমন ছলনা করলা,লুকোচুরি
খেললা ?এইকি ছিল তোমার মনে৷কবিতা বলল বারে রাতে তুমি আমাকে মেলায় যাব কিনা বলে ছিলে তা কি এখনই ভুলে গেলে৷ আর আমাকে তোমার সাথে না নিয়ে একা একা মেলায় যাচ্ছিলে সেটা কি ভালো কাজ৷আমি তোমার সাথে মেলায় আসলাম সেটা তোমার কাছে মনে হল মন্দ কাজ ছলনা,লুকোচুরি? তা হয় হক এতে আমার কিছু করার নাই?আমি মনে করি,আমি যা করেছি ঠিকই করেছি সেটা মানা না মানা এখন তোমর বেপার৷ রহিম বলল রাতে যখন আমি তোমাকে ফোন করে বলে ছিলাম কবিতা তুমি কি কাল আমার সাথে মেলায় যাবে৷তুমি তখন বল্লে আমার জ্বর আমি যাব কেমন করে৷মা যেতে দিবেনা তুমি একাই যাও লক্ষি সোনা !তাই আমি আর বেশি কিছু বলিনি৷তাই বলে কি সব দোষ একা আমার?সকালে তুমি ফোন দিয়ে বলতে পারতে আমি মেলায় যাব রহিম ভাইয়া আমাকে সাথে নিয়ে যেও?আমি কি তোমাকে আসতে মানা করতাম?কবিতা বলল তা করতা না সে বিশ্বাস তোমার উপর আমার ছিল৷ সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হল রাতে তোমাকে না বলাটা ভুল হয়েছে৷এখন যদি বলি যাব,তুমি হয়তো আমার উপর রেগে যেতে পার৷তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যা হবার হবে৷তোমাকে কোন কিছু না যানিয়ে তোমার সাথে মেলায় যাব..বোরকা আর মুখোশ পড়ে৷যাতে তুমি আমাকে চিন্তে না পার৷ তাই এভাবে চলে এলাম৷এসে দেখলাম তুমি ঠিকই আমাকে চিন্তে পারছ না৷তখন ভাবলাম পরিচয় না দিয়ে এই ভাবেই যাওয়া যাক৷পরে নাহয়
রিসকায় যেতে যেতে পরিচয় দিব?কিন্তু যখন দেখলাম তুমি আমাকে কিছুই বলছ না তাই আমিও পরিচয় দেইনি৷এখন বল
দোষটা কার আমার না কি তোমার ?তা ছাড়া আমি যখন তোমাকে বললাম আমাকে একটা বেলি ফুলের মালা কিনে
দিবেন,আমি খোপায় পড়ব তখন ওকি বোঝতে পারনি আমি ছাড়া এমন কথা কে তোমাকে বলতে পারে ...?তারপর ঝুমকা চূড়ি নুপুর অবশেষে আলতাও কিনে দিলে কই তখন ওতো কিছূ বলনি আমাকে?আমি যা যা চেয়েছি তুমি তা তা কিনে দিয়েছ ?এখন তুমি বল সব দোষ কি একা আমার ,নাকি তোমাও দোষ আছে ?হ্যা আমি মানছি দোষ করেছি৷ এইটুকু লুকোচুরি খেলেছি শুধু আমার কণ্ঠটা চেইন্স করেছি এই ৷আর তুমি প্রতি বছর আমাকে যা যা পড়ে মেলায় আসতে বলতে আজ আমি তাই তাই পড়ে এসেছি৷ লাল পাইড় ওয়ালা সাদা শাঁড়ী লাল নিল ও সবুজ রঙের চুড়ি খোপায় বেলি ফুলের মালা,পায়ে নুপুর আলতা কপালে গোলাপ ফুলের লাভ টিপ ঠোটে লাল লিপিষ্টক কানে ঝুমকা ইত্যাদি৷ এখন বল আমাকে দেখতে কেমন লাগছে?রহিম কবিতার কথা শুনে বলল সবই শুনলান সবই বুঝলাম অবশেষে দেখছিও ৷ তোমাকে একে বারে বউ বউ লাগছে৷ তবে .....কবিতা বলল তবে কি ? রহিম বলল তবে তুমি আমাকে এভাবে ঠকাবে তা তোমার কাছ থেকে কখনও আশা করিনি ৷ কবিতা বলল আমাকে বউ বউ লাগছে সত্যি বলছ না কি আমাকে খুশি করার জন্য বানিয়ে বলছ?আর তোমাকে আমি কি করে ঠকাইলাম?রহিম বলল আরে পাগলি মিথ্যা নয় সত্যি ...মনে হচ্ছে যেন তুমি আমার বিয়ে করা নতুন বউ ?কবিতা বলল ওরে দুষ্ট ,খুব পেকে গেছ তাই না,আমাকে বউ করার এতোই
যদি শখ হয় তবে খালা আম্মাকে গিয়ে বলনা দেখি কেমন পার ? রহিম হাসতে হাসতে বলল আজ বাদে কালতো বউ হবাই এতে শখের কি হল? আর মাকে বলে কি হবে ,মা কি না বলবে ৷কবিতা বলল খালাআম্মা না করবেন না তবে .... রহিম বলল তবে কি ?কবিতা বলল তবে মান সম্মানে একটা বেপার আছে না ৷আর তুমি যে বল্লে আমি তোমাকে ঠকিয়েছি ?আমি তোমাকে ঠকালাম কি করে ,কি সেটা? রহিম বলল সেটা হল আমার গালে এখন পর্যন্ত একটাও কিস দেওনি৷ কবিতা বলল ও তাই বুঝি ?সে জন্য আমার উপর তুমি রাগ করে বসে আছ সোনা!সরি আমার ভুল হয়ে গেছে লক্ষি সোনা ৷কিস তোমায় করব তবে এখন না একটু আপেক্ষা কর ৷ সময় হলে তোমার পাওনা করায় গন্ডায় পরিশোধ করে দিব ৷ রহিম বলল কখন তোমার সময় হবে ?কবিতা বলল এত পাগল হলে চলবে কি ?ভালো কিছু পেতে হলে একটু অপেক্ষাতো করতেই হবে !শোননি কবি বলেছেন সবুরে মেওয়া ফলে৷রহিম বলল ঠিক আছে তোমার সাথে কথায় পারা যবেনা তোমার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা৷তবে এখন চল পান্তা ইলিশ খেয়ে মনটা তাজা করে আসি ৷তারপর সারাটা দিন নেচে গেয়ে বেড়াবো ৷ কবিতা বলল ঠিক আছে চল ৷
এই বলে রহিম আর কবিতা পান্তা ইলিশ খেতে চলে গেল ৷
এই ছিল অন্য রকম প্রেমের গল্প৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন